অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে আটক হলেন ৪৭৬ জন


করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রাজধানীতে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়ায় ৪৭৬ ব্যক্তিকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আট বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ও অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এনটিভি অনলাইন কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাকিদের থানায় আটকে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি নজরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনে বলেন,  ‘দুপুর ২টা পর্যন্ত আমরা মোট ১৬৭ জনকে আটক করেছি। এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হবে কি না হবে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বলা যাবে।’

মিরপুর বিভাগের ডিসি আ স ম মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর ১টা পর্যন্ত ১০০ জনের মতো ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘আমার বিভাগে মোট ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যৌক্তিকতা দেখে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

মতিঝিল বিভাগের এডিসি এনামুল হক মিঠু বলেন, ‘দুপুর ১টা পর্যন্ত আমরা তিনজনকে আটক করেছি। এরপর আরও দু-চারজন হতে পারে। বিকেল ৫টার দিকে আরেকটি আপডেট আমরা দিতে পারব।’

ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা মোট ২০ জনকে আটক করেছি। এর মধ্যে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বাকিরা আমাদের কাছে আছে। তাদেরকে মামলা দেওয়া হবে কি না সেই বিষয়টি পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

লালবাগ বিভাগের ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এদেরকে মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হবে।’

উত্তরা বিভাগের ডিসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দুপুর ১টা পর্যন্ত মোট ৪১ জনকে আটক করেছিলাম। এদের মধ্যে সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট। বাকিদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

গুলশান বিভাগের এডিসি কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিভাগে মোট সাতজনকে আটক করা হয়েছে। এদের সবাইকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।’

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠপ্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে এ ব্যাপারে ২১ দফা বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে এবং শিল্প কারখানা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। উন্মুক্ত স্থানে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাঁচা বাজার ও নিত্যপণ্য কেনাবেচা করা যাবে।

এ ছাড়া শপিংমল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে বিধিনিষেধ কার্যকরে সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

২১ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে-

১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যাচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরণের সামাজিক (বিবাহোত্তর ওয়ালিমা অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি।

৮. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত।

১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে।

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।

১৭. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিডিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সে সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।