আইন ভেঙে স্কুলের পাশে ইটভাটা,জানেনা প্রশাসন


“রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনয়নের আরঙ্গবাদ এলাকার এই ভাটার ধুলা ও ধোঁয়ায় জটিল রোগের ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বাসিন্দারা”

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাজশাহী: আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের চোখের সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ও ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের আরঙ্গবাদ এলাকার ‘এম. আর.এস ব্রিক্স’ নামে এই ইটভাটায় এখন পুরোদমে কাজ চলছে। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও আপশাশের বাসিন্দারা ভাটার ধুলা ও ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সর্দি, কাশি ও ফুসফুসজনতি রোগের প্রবণতা খুবই বেড়ে গেছে।

 

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন-২০১৩ অনুযায়ী এমন স্পর্শকাতর এলাকায় ইটভাটা করার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও ভাটা করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ দণ্ডনীয় অপরাধ। এরই মধ্যে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট মৌখিক অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। প্রশাসন যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

 

সরেজমিনে বাগমারা আরঙ্গবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বাগমারা এলাকার ইটভাটা ব্যাবসায়ী ফজলু, সুজন ও শিক্ষক মোঃ আবু জাফর মাষ্টার গত কয়েক বছর থেকে স্কুলের পাশেই প্রায় ১২০ ফিট দুরেই ভাটায় ইট তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। এখন সেখানে পুরোদমে ইট তৈরি হচ্ছে। ফসলি জমিতে চলছে ইট তৈরির কাজ। এসব জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্কুল ভবনে ধুলার আস্তরণ পড়েছে। শ্রেণিকক্ষে ধুলাবালি জমে আছে। এই বিপর্যস্ত পরিবেশের মধ্যেই পড়াশোনা করতে হয় কোমলমতি শিশুদের।

 

ইটভাটা অপসারণের দাবি জানিয়ে অভিযোগ করে এলাকাবাসী বলেন, দূর থেকে ট্রাক, নসিমন, ভটভটিতে করে মাটি আনা হচ্ছে। ধুলাবালিতে পরিবেশ দূষিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাশি, অ্যালার্জিজনিত রোগ ও শ্বাসকষ্ট প্রকট আকার ধারণ করে। চলাচলের রাস্তাটিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবাসিক এলাকার মধ্যে ইটভাটা করায় আশপাশের বাড়িতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোয় এলাকার গাছপালা, ঘরবাড়ি, পশুপাখি মারত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়া মেশিন দিয়ে ইট কাটার বিকট শব্দে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে মনোনিবেশ করতে পারে না। অথচ আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশ বা আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।

 

ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-এর ৮(১) ধারার ক, খ, গ ও ঘ উপধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পৌরসভা ও আবাসিক এলাকা এবং সরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং ঘনবসতি এলাকার মধ্যে ভাটা করা যাবে না। ব্যবহার করা যাবে না কৃষিজমি। কিন্তু এম আর এস ব্রিক্স এর মালিক বাগমারা এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী শিক্ষক মোঃ আবু জাফর মাষ্টার সব আইন উপেক্ষা করে ভাটার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

এলাকাবাসী ও আরঙ্গবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রশাসন ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়াম্যানের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো সুফল পায়নি তারা।

 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আজের আলী ও সোলাইমান নামের এক ব্যক্তি জানান, চেয়াম্যানের কাছে প্রতিকার চেয়েও কোনো ফল পাননি। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে তাদের ঘরবাড়ি। রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে না। এ সমস্যার কথা আর কোথায় জানাব- তা ভেবে পাচ্ছি না।

 

অারঙ্গবাদ গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস বলেন, বাড়ির পাশে ইটভাটা। রাত-দিন কাজ হচ্ছে। প্রচণ্ড শব্দে রাতেও ঘুমাতে পারছি না।

 

আরঙ্গবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী বলেন, বিদ্যালয়ের এত কাছে ইটভাটা গড়ে উঠেছে যা বিদ্যালয় সহ আশেপাশের পরিবেশ দুষণ করছে, আমি অনেকবার অভিযোগ দিয়েছি কোন কাজ হয়নি। একটি প্রভাবশালীর মহল এই অবৈধ ইটভাটার সাথে জড়িত রয়েছে।

 

বিদ্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, ধুলাবালিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। তা ছাড়া রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ আছে বিদ্যালয় চালু থাকলে চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হয়।

 

গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আলমঙ্গীর হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলে, এটি আমার কাজ না পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আপনার কি ভুমিকা ছিলো? এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদ উত্তর দিতে পারেননি।

 

 

এ ব্যাপারে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসিয়াল নম্বরে একাধিবার কল করা হলে ফোন রিসিভ করেননি কেউ।

 

 

২২(মার্চ) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, এখনও পুরোদমে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার,আরঙ্গবাদ, রামরাম খরাদিয়া এলাকার মাহাবুব রহমমানে ভি.আই.পি. পাশেই রয়েছে জামাল নামের এক ব্যক্তির নামে (জলি-১) আব্দুস সোবান নামের এক ব্যক্তির রয়েছে এ এসএস. নামে ইটভাটা একটি ইউনিয়নে প্রায় ১০ টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ভাটাগুলো বন্ধ করার কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

 

আইন উপেক্ষা করে ভাটা নির্মাণের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই, কেউ অভিযোগ করেনি, তবে বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা গড়ে উঠলে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

 

২২(মার্চ) সোমবার বিকালে মোবাইল ফোনে বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে উঠা ইটভাটার বিষয়ে মালিক শিক্ষক মোঃ আবু জাফর মাষ্টারর সঙ্গে কথা হয়। আইন অমান্য করে ইটভাটা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভাটা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছেন কি-না। এ সময় তিনি তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন ও পরবর্তীতে কল দিয়ে প্রতিবেদক’কে বলেন, যা খুশি আপনারা লিখেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। তবে এখন নেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।