ইতিহাস গড়ে নারী বিশ্বকাপ স্পেনের


নারী বিশ্বকাপ হাতে স্পেন নারী ফুটবল দলের উল্লাস । ছবি : ফিফা

ম্যাচের বয়স তখন ২৯ মিনিট। যে মাঝমাঠ নির্ভর ফুটবলে ইংল্যান্ড মাতিয়েছে গোটা বিশ্বকাপ, সেই মাঝমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। বল পেয়ে দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাক সাজায় স্পেন। গতির ঝড়ে ইংলিশ রক্ষণকে ছিটকে দিয়ে বল খুঁজে নেয় স্প্যানিশ অধিনায়ক ওলগা কারমানোর পা। বামপ্রান্ত থেকে আড়াআড়ি শটে পরাস্ত করেন পুরো আসরে দেয়াল হয়ে থাকা ইংলিশ গোলরক্ষক ম্যারি আর্পসকে।

আগেই নিশ্চিত ছিল নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে এবারের নারী বিশ্বকাপ। সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়া সেজেছিল নতুন চ্যাম্পিয়নকে বরণ করে নিতে। আজ রোববার (২০ আগস্ট) ফিফা নারী বিশ্বকাপ ২০২৩ এর ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্পেন ও ইংল্যান্ড। কারমোনার একমাত্র গোলে ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের বুনো উল্লাসে মাতল স্পেন।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে যদি বলা হতো চ্যাম্পিয়ন হবে স্পেন, হয়তো খোদ স্প্যানিশরাই বিশ্বাস করতো না। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জাপানের কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর স্প্যানিশ নারীদের পক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া কঠিনই ছিল। যেখানে দৌর্দণ্ড প্রতাপে ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ডের পক্ষে পাল্লা ছিল ভারী। স্পেনের হারানোর কিছু ছিল না। বরং হাতছানি দিয়ে ডাকছিল ইতিহাস। শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়েছে লা রোজারা।

অধিনায়ক কারমোনার একমাত্র গোলেই বিশ্বকাপ জিতল স্পেন। ছবি : ফিফা

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে যায় ইংল্যান্ড। কোচ সারিনা উইগম্যানের শিষ্যরা গোল পেতে পারত ১৬তম মিনিটে। পুরো আসরে অসাধারণ খেলা ইংলিশ ফরোয়ার্ড লরেন হ্যাম্পের বল ফিরে আসে বারে লেগে। মিনিট চারেক বাদে দারুণ আরেকটি আক্রমণ সাজায় লায়োনিসরা। ইলা টুনের ডিফেন্সচেরা পাসে হ্যাম্পের চমৎকার শট রুখে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক ক্যাটা কোল। উল্টো স্রোতের বিপরীতে ২৯ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক কারমোনা।

গোল হজম করে মরিয়া হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। বেশ কয়েকটি আক্রমণ করলেও প্রধমার্ধে আর গোল হয়নি। এক গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় স্পেন।

বিরতি থেকে ফিরে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে স্পেন। ইংল্যান্ড বেশ কয়েকটি আক্রমণ শানালেও ভাঙতে পারেনি লা রোজাদের রক্ষণ। বরং, খেলার ধার বাড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় স্পেন। ফলশ্রুতিতে, ৬৯ মিনিটে পায় পেনাল্টি। ডি বক্সের ভেতরে ইংলিশ ডিফেন্ডার কেইরা ওয়ালশ হ্যান্ডবল করলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। তবে, স্পটকিক থেকে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জেনিফার হারমোসোকে গোলবঞ্চিত করেন লায়োনিস গোলরক্ষক আর্পস।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে অতিরিক্ত সময় হিসেবে ১৩ মিনিট দেওয়া হয়। শেষ মিনিটে জোড়া আক্রমণ করে ইংল্যান্ড। প্রথম শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে স্পেন। শেষ মুহূর্তের কর্নারে ম্যাচের হিরোইন বনে যান স্পেন গোলরক্ষক কোল। বাম দিকে ঝাঁপিয়ে দলকে বাঁচান। খানিক বাদে বাজে রেফারির শেষ বাঁশি।

স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়া পরিণত হয় লাল উৎসবে। অপরদিকে, বেদনার নীল রঙে ছেয়ে যায় ইংলিশ শিবির। নারী বিশ্বকাপ পায় তাদের পঞ্চম চ্যাম্পিয়নের দেখা। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান ও নরওয়ের পর নারী ফুটবলের নতুন রাণী এখন স্পেন।