পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে চলতি মাসের শেষের দিকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসসের।
আজ রোববার ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন একটু খারাপ সময় গেলেও আমরা আশা করি—এ মাসের শেষের দিকে অবস্থার একটু পরিবর্তন হবে এবং সে সময় আমরা স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার খুলে দিতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংশ্লিষ্ট ১১টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পরীক্ষার ফলাফলের পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন গ্রহন করেন।
সরকার সর্বস্তরের মানুষকে সুরক্ষার জন্য টিকা দেওয়ার যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার আওতায় এসে সবাইকে টিকা গ্রহণের আহ্বান অনুষ্ঠানে পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
টিকা গ্রহণে অনেকের অনীহার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আমরা খুলতে পারি, সেজন্য টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কাজেই যাঁরা এ পর্যন্ত টিকা নেননি, তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে—আপনারা টিকা নিয়ে নেবেন। এ ভ্যাকসিন নিলে পরে করোনা ধরলেও সেটা ওরকম খারাপ পর্যায়ে যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিল বলেই করোনাকালেও অনলাইনে ও টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছে। ‘তথাপি এ করোনাকালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে পরিবারগুলো ছোট হয়ে আসার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে না পারায় অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীকে একাকিত্বে ভুগতে হয়েছে।’
এ ছাড়া সরকারপ্রধান বলেন, ‘অনলাইন বা টেলিভিশনে তার সরকার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে সেটা ঠিক, কিন্তু স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার যে নির্মল আনন্দ প্রাপ্তি, তা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যা হোক, যখনই আমরা করোনাকে একটু নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি, তখনই স্কুলগুলো চালু করেছিলাম। কিন্তু, দুর্ভাগ্য হচ্ছে—আবার নতুন সংক্রমণ দেখা দিল। সরকার ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু, ২০২২ সালে এসে এ ফেব্রুয়ারি মাসের আগে থেকে আবার ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্টে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি—আমরা খুব দ্রুত সমাধান করতে পারব। এরই মধ্যে আমরা টিকাও দিচ্ছি। যেসব ছেলে-মেয়ের বয়স ১২ বছরের ওপরে, তাদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে।’
রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে বিভাগ-ভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ছয়টি পত্রে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এসব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
২০২১ সালে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে সাত দশমিক ৩০ লাখ ছেলে এবং ছয় দশমিক ৭০ লাখ মেয়ে।