বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ নামের করোনা ভ্যাকসিনটির প্রথম ধাপে ৫০ লাখ ডোজ আগামীকাল সোমবার দেশে পৌঁছুবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এ টিকা বাজারজাত করছে ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট।
রবিবার (২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতোমধ্যে উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা আমাদের দিয়েছে ভারত সরকার। চুক্তি অনুযায়ী কাল সোমবার আসছে আরও ৫০ লাখ টিকা। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি টিকা আসবে।’
পরবর্তী ধাপে আসা টিকা ঢাকাসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোথায় কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে সেটিও ঠিক করা আছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আগামী ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে নার্সদের থেকে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ভ্যাকসিন কীভাবে প্রয়োগ করা হবে সেজন্য আমাদের জাতীয় কমিটি আছে। তারা এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি শেষ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে। অনেক ওষুধেই তো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এ ভ্যাকসিনে যে সেটি হবে না, তা বলতে পারছি না। তবে করোনা ভ্যাকসিনে যদি কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সেজন্য আমরা প্রতিটি হাসপাতালে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছি।’
টিকা নেয়ায় মানুষকে কীভাবে আশ্বস্ত ও আগ্রহী করা হবে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন বিশ্বে রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। এসব ভ্যাকসিন থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক কম হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাজ্যে লাখ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ হয়েছে। তাই এ ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের প্রয়োজন নেই।’
‘কাউকে জোর করে ভ্যাকসিন দেয়া হবে না, যে স্বাধীনভাবে ভ্যাকসিন নিতে চায় তাকেই দেয়া হবে’ বলে জানান মন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আগে ফ্রন্টলাইনারদের ভ্যাকসিন দেবো। পর্যায়ক্রমে যাদের ভ্যাকসিন লাগবে তাদের সবাইকে দেয়া হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এখনও বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি কেউ বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন দিতে চায়, সে বিষয়ে আমরা পরে দেখবো।’
জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিতে ডা. জাফরুল্লাহর আহ্বান বিষয়ে সাংবাদিকরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘জাফরুল্লাহ কি বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। উনার যদি আগে ভ্যাকসিন লাগে তাহলে আমরা সেই ব্যবস্থা করবো। ফ্রন্টলাইনারদের পর আমরাও ভ্যাকসিন নেবো।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) উপহার হিসেবে ভারতের পাঠানো করোনা ভাইরাসের ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে পৌঁছে।
গেল ৫ নভেম্বর ‘কোভিশিল্ড’ নামের ওই টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে সেরামের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। গত ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এ টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ধাপে ভারত থেকে সেরামের ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ভারত থেকে আনা প্রতি ডোজ টিকার ক্রয়মূল্য হবে ৪ ডলার (দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৪০ টাকা)। সব মিলিয়ে এ দাম পড়বে ৫ ডলার (দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৪২৫ টাকা)।
করোনা ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তির ধারা অনুযায়ী, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৬ মাসে বাংলাদেশকে ৩ কোটি টিকা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রতিমাসে টিকা আসবে ৫০ লাখ করে। বাংলাদেশ সরকার জনগণকে বিনামূল্যে এ টিকা দেয়ার ঘোষণা আরও আগেই দিয়ে রেখেছে।
বেক্সিমকো বেসরকারিভাবে ৩০ লাখ টিকা আনার কথা শোনা যাচ্ছে। ওই টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১ হাজার ২০০ টাকা।