বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর। ২০ জানুয়ারী, ২০২২ এর বায়ু মান সূচক রেকর্ড আনুযায়ী গত তিন মাসে সর্বোচ্চ গড় স্কোর ছিল ৩৬৫। বায়ু মান সূচকে ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকলে ‘খারাপ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে ৩০১ থেকে ৪০০ রিডিংকে ‘বিপজ্জনক’ বলা হয়, যা গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে এবং এটাতেই ঢাকার অবস্থান। বায়ু মান সূচকে ৪০১ এবং ৫০০ এর মধ্যে থাকলে গুরুতর বলা হয়। বায়ু মান সূচক দৈনিক বায়ুর গুণমান রিপোর্ট করার একটি সূচক। সূত্র: A24 News Agency
সরকারী সংস্থাগুলি একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটা পরিষ্কার বা দূষিত তা জনগণকে জানানোর জন্য এবং এর প্রভাব তাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উদ্বেগের সে তথ্য দিতে এটি ব্যবহার করে। বায়ু ও শব্দ দূষণ সূচক রিডিং নেন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট তৌফিকুর রহমান, তিনি বলেন, “আমাদের আজকের জরিপের স্থান সংসদ ভবন এলাকা। এটি একটি শান্ত এবং কোলাহলমুক্ত এলাকা। তাই এখানে বায়ু ও শব্দ দূষণ সূচক স্বাভাবিক হওয়া উচিত। তার পরিবর্তে, এখানে বায়ু এবং শব্দ দূষণ উভয় সূচক স্বাভাবিক গড় থেকে ২-৪ গুণ বেশি দাঁড়িয়েছে।“
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুনঃ https://youtu.be/qUCRtXqu7-I
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জনাব শরীফ জামিল বলেন,“বাতাসে ছোট ছোট কণার উপস্থিতি মারাত্মকভাবে বেড়েছে যা নির্দেশ করে যে এগুলো নির্মাণ কাজ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মেগা প্রকল্প থেকে আসছে। আইন বলে যে বায়ু মান সূচক ৩০০-এর উপরে গেলে, একটি বিপজ্জনক অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। সেই পরিস্থিতিতে, যদি কারও শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ফুসফুসের সমস্যা থাকে, তবে তাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। জনগণকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিত। আমাদের বায়ু মান সূচক ৪০০-এর উপরে চলে যাচ্ছে। আমরা একটি গ্যাস চেম্বারে বাস করছি শুধু ।“
শীতের আগমনের সাথে সাথে নির্মাণ কাজ, রাস্তা, ইটভাটা এবং অন্যান্য উৎস থেকে দূষক কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে শহরের বায়ুর গুণমান তীব্রভাবে খারাপ হতে শুরু করে।স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “২০১৬-২০১৭ সালে বায়ু দূষণ ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৭-২০১৮ সালে একই হারে দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ২০১৯ সালেও একই হারে দূষণ বেড়েছে, ২০১৯ সালের শেষে; পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের কিছু উদ্যোগের কারণে, যেমন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, বায়ু দূষণ হ্রাসের প্রবণতা ছিল। আমরা ২০২০ সালে দূষণ হ্রাসের প্রবণতা লক্ষ্য করেছি, যখন মার্চ-এপ্রিল মাসে কোভিডের জন্য লকডাউন শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট থেকে বায়ু দূষণের সূচক এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে গড় দূষণ আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে সর্বকালের উচ্চ পর্যায়ে চলে এসেছে।“
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের সংস্পর্শে মানুষের শ্বাসযন্ত্র এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, যা বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগের কারণ হয় এবং কোভিড-১৯-এর ঝুঁকি আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
জনাব কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, “আমরা পিএম ২.৫ (খুব ছোট কণা) বলতাম যা সারা বছরের বায়ু দূষণ সূচকের গড়। সাধারণত, আমরা এটি খালি চোখে দেখতে পারি না। সারা বছরের জন্য পিএম ২.৫ এর গড় হল ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। আমাদের মন্ত্রনালয় অনুমোদিত পরিবেশ সহনীয় পিএম ২.৫ সূচক হল ১৫ মাইক্রোগ্রাম। চলমান বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিবেশের ওপর সরাসরি প্রভাব সৃষ্টি করেছে। আমরা ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ২,০০০ দিনের তথ্য- উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছি৷ অনুসন্ধানে জানা গেছে যে ২,০০০ দিনের মধ্যে আমরা ৩৮ দিন তাজা বাতাস পেয়েছি অর্থাৎ ৬ বছরে ৩৮ দিন; যা তাজা বাতাস পাওয়ায় বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুসারে প্রতি বছর ৭ দিনেরও কম ।“