চাঁপাইনবাবগঞ্জে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার


ফয়সাল আজম অপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ প্রথমবার বিয়ের পর ৭ বছরের দাম্পত্য জীবন পার করে ডিভোর্সের পর ১ বছর বিরতি দিয়ে আবারো বিয়ে করলেও নিজ স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করছেন স্বামী। পুনরায় বিয়ের পরেও স্বামী দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায় অসহায়ভাবে দিন যাপন করছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর-রাজপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ে গৃহবধূ মোসা. রিনা খাতুন ও ৫ বছর বয়সী কন্যা সন্তান সামিহা খাতুন।

 

উভয় পক্ষের সম্মতি ও উপস্থিতিতে বিয়ে হলেও এখন তা সরাসরি অস্বীকার করছেন, সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দেওয়ানটোলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. সোহেল রানা। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের ও একটি মসজিদের ইমাম লক্ষীপুর গ্রামের মো. আখতারুল ইসলাম। বিয়ের বিভিন্ন নথি ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, সামাজিক সকল রীতি মেনে ২০১২ সালের পহেলা নভেম্বর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সোহেল রানা ও রিনা খাতুনের। এরপর দীর্ঘ ৭ বছরের দাম্পত্য জীবনে সংসারে এক মেয়ে হয়। স্বামী মো. সোহেল রানা এবং শশুর বাড়ির লোকজন বাবার বাড়ি হতে যৌতুকের টাকা ও ঘরের নানান আসবাবপত্র নিয়ে আসার জন্য দীর্ঘদিন নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

 

৭ বছরের দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন সময়ে নানা অযুহাতে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে বাধ্য করা হতো রিনা খাতুনকে। রিনা খাতুনের বাবা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, জামাই ও তার বাপের বাড়ির চাপে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার একটি মোটরসাইকেল, সোনার অলংকারসহ ঘরের নানান আসবাবপত্র দিয়েছি। কিন্তু পরে আরো ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করলে তা দিতে না পারায় আমার মেয়েকে বেধড়ক মারধর করে সোহেল রানা। যৌতুকের দাবিতে কথায় কথায় সোহেল তাকে মারধরসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ডিভোর্স হয়।

 

তিনি আরো জানান, ডিভোর্সের ১ বছর পেরিয়ে গেলে আমার মেয়েকে তারা (জামাই পক্ষের লোকজন) আবারো নিতে চাই। পরে জামাইয়ের আগ্রহ ও ছোট্ট নাতনীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে গত বছরের ২৭ আগস্ট লক্ষীপুরের ইমাম মো. আখতারুল ইসলাম পুনরায় তাদের বিয়ে পড়ান। রিনা খাতুন বলেন, আবারো বিয়ের পর ৫ দিন শশুর বাড়িতে ছিলাম। পরে আমার স্বামী বাইরে যাওয়ার কথা বলে মেয়েসহ আমাকে বাবার বাড়িতে রেখে আসে। এরপর আর কোন খোঁজ না নেয়ায় পরে যোগাযোগ করলে বিয়ের কথা সরাসরি অস্বীকার করে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন।

 

বিয়ের রেজিস্ট্রি না হওয়ায় কোন আইনগত পদক্ষেপ নিতেও পারছি না। অথচ দ্বিতীয়বার বিয়ের সময় তারাই (স্বামীর পক্ষের লোকজন) বলেছিলো, এসবের দরকার নেয়। সুবিধামতো সময়ে পরে করে নিতে হবে। রিনা আরো বলেন, ৫ বছর বয়সের মেয়েকে নিয়ে এখন অসহায়ের মতো দিন যাপন করছি। মেয়েরও কোন খবর নেয় না। অভিযুক্ত সোহেল রানা, রিনা খাতুনের সাথে ডিভোর্সের পর আর দ্বিতীয়বার বিয়ে করিনি বলে অস্বীকৃতি জানান, স্ত্রী কন্যার ভরণপোষণের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে এরিয়ে গিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সোহেল রানা।

 

বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক সোহেল রানা-রিনা খাতুনের দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়ের রেজিস্ট্রি না হওয়ায় সোহেল রানা এখন বিয়ের কথা অস্বীকার করছে।