চেনার আড়ালে অচেনা সালমান


সালমান খান। নাম শোনার পরই চোখে ভেসে উঠে বলিউডের সবচেয়ে বয়সী ব্যাচেলরের মুখখানি। সিনে পরিবারে জন্ম নেয়া সালমানের বাবা সেলিম খান ছিলেন বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার। যদিও একটা সময় তিনি পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৬৪ সালে সুশীলা চরককে বিয়ে করেন সেলিম খান। পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এই দম্পতির ঘর আলো করে সালমানের জন্ম হয়।

জন্মের সময় তার নাম রাখা হয় আব্দুর রশিদ সেলিম সালমান খান। পিতার দিক থেকে তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন বর্তমান পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার আলোকোজাই পশতুন। যারা অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি মধ্যপ্রদেশে অভিবাসিত হয়েছিলেন।

সেলিম খানের পুত্র হিসেবে সালমান খানেরও রুপালি জগতে আসাটা খুব অস্বাভাবিক নয়। সেই স্বাভাবিক আগমনকে অস্বাভাবিক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। ছুঁয়েছেন জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ চূড়া। ‘স্টারডম’ শব্দটাকে যেন নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছেন সালমান।

‘বলিউড ভাইজান’ কিংবা ‘সুলতান’ নামে অভিহিত এই মহাতারকা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম খুঁটি। তার নামেই সিনেমা হয় সুপারহিট। আর দর্শকরা ভাসে উল্লাসের জোয়ারে। কিন্তু চকচকে তারকা মোড়কের ঢাকা সালমান খান সম্পর্কে অনেকেই জানেন যে, সালমান একজন পেইন্টার। তবে এটা অনেকেই জানেন না যে, ‘জয় হো’-র পোস্টারগুলো তারই আঁকা। এমনও শোনা যায় যে, আমির খানের বাড়িতে একাধিক পেইন্টিং রয়েছে সালমানের। এমনকি প্রয়াত নায়িকা শ্রীদেবীও সালমানের পেইন্টিং তার শোবার ঘরে সাজিয়ে রেখেছিলেন।

শাহরুখ নয়, ‘বাজিগর’ ছবিটি অফার করা হয়েছিল সালমানকে। কিন্তু, ক্যারিয়ারের শুরুতে এক ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি তিনি। তাই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সেই প্রস্তাব। এরপর শাহরুখ সেই চরিত্র করে ইতিহাস হয়ে যান।

বাবার গুণটা ছেলের মধ্যেও দেখা যায়। ‘বীর’ বা ‘চন্দ্রমুখী’-র মতো একাধিক ছবির চিত্রনাট্য সালমানের লেখা। এই তথ্যটাই সেভাবে প্রচলিত ছিল না এতদিন। কোনও দিন কোনও সিনেমার রিভিউ পড়েন না সালমান। এটাও একটা ব্যতিক্রমী বিষয় তার মতো স্টারের পক্ষে। কে তার ছবি নিয়ে কী বলল, জানতেই চান না তিনি।

স্কুলে পড়ার সময় বহুবার সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সালমান। ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি দেশের বাইরেও সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

এটা সবারই জানা যে, সালমানের একটা বড় ফ্যান বেস আছে। তবে এটা বোধহয় কেউ জানেন না যে, তার ফ্যানেরা একটা রেস্তোরাঁ বানিয়েছেন সালমানকে উদ্দেশ্য করে। সেই রোস্তোরাঁর নাম ‘ভাইজান’স

তুরস্কে ‘এক থা টাইগার’ ছবির শুটিং চলাকালে ছোট রেস্তোরাঁতে একটা দৃশ্য শুট ছিল। সেই রেস্তোরাঁতে সাউন্ড সিস্টেমসহ অন্যান্য অনেক কিছুর ঘাটতি ছিল, পরে সালমান পুরা রেস্তোরাঁ নতুন করে সাজান এবং শুটিং শেষে রেস্তোরাঁর মালিকে সব দিয়ে দেন। পরে সালমানের নামে রেস্তোরাঁটির নামকরণ করা হয়।

সমাজের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জীবনে আশার আলো ফোটানোর লক্ষে সালমান খান গড়ে তুলেছেন ‘Being Human foundation’। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি এটি করেছেন বলে নিজেই জানিয়েছিলেন।

ভারতে বহু মানুষ আছে যারা লিউকেমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া, কনজেনিটাল ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সহ নানা রোগে ভুগে থাকেন। অস্থিমজ্জা বা বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তাদেরকে সুস্থতা প্রদান করা সম্ভব। অস্থিমজ্জা দান করার ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে তিনি নিজে বোন ম্যারো ডোনেট করেছেন এবং ডোনার রেজিস্ট্রি ইন্ডিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

যারা সমাজে অবহেলা-বঞ্চনার শিকার হয়ে ছিটকে পড়েন, নায়ক সালমান তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। বহুবারই এমন দাঁড়িয়েছেন। অর্থ সহায়তার পাশাপাশি তিনি হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সাথে দেখা করতে যান। তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করেন। বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে তার সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

নায়ক সালমানের বাইরে একজন মানবিক, সামাজিক ও পরোপকারী সালমানের প্রশংসা রয়েছে দেশ ও দেশের বাইরেও। তার দুই ছোটভাই আরবাজ খান ও সোহেল খানও বলিউডের নামি অভিনেতা। একমাত্র বোন আলভিরা খান অগ্নিহোত্রী প্রযোজক ও পোশাক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন সালমানের বাবা সেলিম খান। বলিউড অভিনেত্রী হেলেনকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর অর্পিতা খানকে দত্তক নেন সেলিম-হেলেন দম্পতি।