জগতবিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্য চন্দ্র রায়ের ১৬০ তম জন্ম বার্ষিকী পালিত


মদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা: পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলীতে বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্য চন্দ্র রায় (পি,সি,রায়)এর ১৬০তম জন্ম বার্ষিকী পালিত হয়েছে।

সোমবার সকালে বিজ্ঞানীর বসত ভিটায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন, পরে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টুর নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামীলীগ, রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদ, জি,বি সভাপতি যুবলীগনেতা আকরামুল ইসলামের নেতৃত্বে আর,কে,বি,কে, হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট ইনস্টিটিউশন, ভূবণ মোহিনী বালিকা বিদ্যালয়, কাটিপাড়া নবীন সংঘ, পি,সি, ক্লাব, প্রফুল্য চন্দ্র সাহিত্য পরিষদ সহ সহ বিভিন্ন পেশার মানুষেরা বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন। পরে সীমিত পরিসরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, তিনি ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী রাড়ুলীতে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা জমিদার হরিশচন্দ্র রায়। মাতা ভূমন মোহিনী দেবী। পিতা-মাতার আদরে সন্তানটি হলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। পিতা তাকে ডাকতেন ফুলু বলে। ফুলুর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়স থেকে। ১৮৬৬ থেকে ১৮৭০ সাল এ চার বছর কাটে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ১৮৭১ সালে ভর্তি হন কলিকাতার হেয়ার স্কুলে।

তারপর ১৮৭৪ অ্যালবার্ট স্কুলে। এখান থেকেই ১৮৭৮ সালে এন্টান্স পাস করেন তিনি। ১৮৮২ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি এবং অনার্স সহ স্নাতক শ্রেনীতে অসাধারন মেধার বলে তিনি গিলক্রিইষ্ট বৃত্তি নিয়ে চলে যান এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই বিএসসি ডিগ্রি নেন। রসায়ন শাস্ত্রে গবেষনারত প্রফুল্ল চন্দ্র মারকুইরাস নাইট্রাইট-এর মত রসায়ন শাস্ত্রে মৌলিক পদার্থ উদ্ভাবন করেন। ১৮৮৬ সালে পিএইচডি, ১৮৮৭ সালে ডিএসসি, ১৯১১ সালে সিআইই, ১৯১২ সালে আবার ডিএসসি এবং ১৯১৮ সালে নাইট উপাধি পান।

ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। দেশ-বিদেশে তার প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আজও মানব সেবা দিচ্ছে। অথচ ফাদার নাইট্রাইট খ্যাত বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায়ের জন্ম ভিটা বাড়ীর ভবনগুলো আজও অবহেলিত। ধসে ধসে পড়ছে ভবনের বিভিন্ন অংশ। গত কয়েকবছর যাবৎ সরকারী উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে তার জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী। বর্তমানে পিসি রায়ের জন্ম ভিটাবাড়ি সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষণ করছে।

তিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। চারটি গ্রামের নাম মিলে ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় দক্ষিণ বাংলায় পিতার নামে প্রথম আর,কে,বি,কে হরিশচন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। একই স্থানে স্যার পিসি রায়ের পিতা উপমহাদেশে নারী শিক্ষা উন্নয়নকল্পে ভূবনমোহিনীর নামে ১৮৫০ সালে রাড়ুলী গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

আজও প্রতিষ্ঠানগুলো স্বমহিমায় এগিয়ে চলছে। দেশ-বিদেশে তার স্থাপিত প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান সাধনায় ফলক স্মরণ করে সর্বস্তরের মানুষ। ১৯৪৪ সালে ১৬ জুন কোন উত্তরসূরী না রেখে জীবনাবসান ঘটে বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের। এলাকাবাসীর মতে, বিশ্ব বরেণ্য এ বিজ্ঞানীর বসত বাড়িকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পি.সি রায় প্রেমী বিজ্ঞানীর জীবনী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবে।

সর্বপরি বিশ্ব বরেণ্য এবিজ্ঞানীর বসতবাড়ী সংরক্ষণসহ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারীভাবে উদ্যোগগ্রহণ করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন এলাকাবাসী।