রফতানি বন্ধের শর্ত দিয়ে অক্সেফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল ভারত সরকার। চুক্তি থাকার পরও রফতানি নিষেধাজ্ঞায় ভ্যাকসিন পেতে সংশয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। তবে ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে এবার জানানো হয়েছে, তাদের টিকা রফতানির ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’কে এমনটিই জানিয়েছেন সেরাম ইন্সটিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন।
তিনি জানিয়েছেন, টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ তাদের টিকা রফতানির ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সেরাম ইন্সটিটিউট এখন অন্য দেশে টিকা রফতানির অনুমতির পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। যা পেতে হয়তো আরও কয়েকমাস সময় লাগতে পারে।
মায়াঙ্ক সেন জানিয়েছেন, রফতানি শুরুর আগেই ভারত সরকারকে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার বিষয়ে সেরাম ইন্সটিটিউট সম্মত হয়েছে। তবে অনুমতি না থাকায় আপাতত অন্য দেশে টিকা রফতানি করতে পারবে না তারা।
টিকা অনুমোদনের পর রবিবার এক সাক্ষাৎকারে ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনেওয়ালা জানান, ভারতের ঝুঁকিতে থাকা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতে রফতানি করা যাবে না, এই শর্তে জরুরি ব্যবহারে রবিবার সেরামকে টিকা উৎপাদনের অনুমোদন দেয় সরকার। সেইসঙ্গে বেসরকারি বাজারে টিকা বিক্রিতে কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
তিনি জানান, আগ্রহী দেশগুলোতে রফতানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা স্থানীয় জনগণের চাহিদা পূরণেই জোর দিচ্ছেন।
ওই সাক্ষাৎকারে পুনেওয়ালা আরও বলেন, ‘ভারত সরকারের চাহিদা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার পর হয়তো দেশের বাইরে রফতানি করা যাবে। ভারতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলো যাতে প্রথমে টিকা পায়, সরকার সেটাই নিশ্চিত করতে চায়। সরকারের এ সিদ্ধান্তে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
গত শনিবার (০২ জানুয়ারি) অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয় ভারত সরকার। এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে চুক্তি করে।
করোনা ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তির ধারা অনুযায়ী, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৬ মাসে বাংলাদেশকে ৩ কোটি টিকা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রতিমাসে টিকা আসবে ৫০ লাখ করে। বাংলাদেশ সরকার জনগণকে বিনামূল্যে এ টিকা দেয়ার ঘোষণা আরও আগেই দিয়ে রেখেছে। এছাড়া বেক্সিমকো বেসরকারিভাবেও ৩০ লাখ টিকা আনবে, যার প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১ হাজার ২০০ টাকা।
গতকাল রবিবার অক্সেফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা মানবদেহে প্রয়োগের চূড়ান্ত অনুমতি দেয়ার দিনই কয়েক মাসের জন্য টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার। ফলে বাংলাদেশসহ চুক্তিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলো টিকা পেতে নতুন করে অপেক্ষার মুখে পড়ে।