অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কিপিং নিয়ে তেমন ভাবতে হয়নি বাংলাদেশকে। মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস না থাকায় দারুণ কিপিং করে নজর কেড়েছেন নুরুল হাসান সোহান। ছুটি কাটিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে ফিরেছেন মুশফিক ও লিটন। টিকে গেছেন সোহানও। এখন কিপিংয়ের ভূমিকায় কে থাকবেন?
বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো অবশ্য কাউকে অখুশি করেননি। উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে কিপিং করবেন সোহান, পরের দুটিতে মুশফিক। এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে পঞ্চম ম্যাচের কিপার কে হবেন।
কোচের এই ঘোষণার পর ব্যাপারটি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই জন্য ব্যাপারটি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। টিম ম্যানেজম্যান্টের এই ঘোষণা প্রকাশ্যে আনাটা ঠিক বলে মনে করছেন না নড়াইল এক্সপ্রেস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লম্বা স্ট্যাটাসে ব্যাপারটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন মাশরাফী।
নিজের ফেসবুক পেজে মাশরাফী লিখেছেন, ‘১৬ বছর যে মানুষটা (মুশফিক) বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সার্ভিস দিচ্ছে, তাকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে আপনি যত বড় ক্ষমতাধর মানুষ হোন না কেন, একটু জায়গা বুঝে বলা উচিত। মুশফিক কীভাবে জাতীয় দলে এসেছে, তা সবাই জানে। সিম্পিলি তার ব্যাটিং দক্ষতায়। একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু কিপার হিসাবেই খেলা যেত, উদাহরণ ভুরি ভুরি। কিন্তু গিলক্রিস্ট আসার পর সব হিসেব পাল্টে যায়, যার সুত্র ধরে ইন্ডিয়া দলে দেখেছি রাহুল দ্রাবিড় কেও কিপিং করতে, যাতে দল সুবিধা মতো অতিরিক্ত একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার খেলাতে পারে। অবশ্যই সেটা লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে।’
এরপর ড্রেসিং রুমের পরিকল্পনা বাইরে ঘোষণা নিয়ে মাশরাফী লিখেছেন, ‘নিজ দলের খেলোয়াড়কে, আপনি যুদ্ধ করে বাঁচতে বলবেন, সেটা ড্রেসিং রুম পর্যন্ত থাকাই ভালো। অবশ্যই দলের স্বার্থ, সবার আগে দলের আগে কোনো খেলোয়াড় হতে পারে না। কিন্তু যে ক্রিকেটারগুলো দেশের হয়ে খেলতে নামে, তারা কোনো সহানুভূতি নিয়ে নয়, বরং তার সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দলে জায়গা পায়। মুশফিকের গল্প আমরা সবাই জানি, তার নিবেদন কোন পর্যায়ে। বাংলাদেশের হাজার হাজার উঠতি ক্রিকেটারদের আইডল সে। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত তারা তাদের মতো করে নেবে, এটাই তো স্বাভাবিক এবং অবশ্যই ভালোর জন্য নেবে। সফল হলে তালি, না হলে গালি, যা সারা বিশ্বেই হচ্ছে। কে খেলবে, কোন পজিশনে খেলবে, কার রোল কি, এগুলো তো দলের একান্ত পরিকল্পনা, যা ড্রেসিং রুমে শুরু, আবার ড্রেসিং রুমেই শেষ হয়। বাহিরে বলতে গেলে তো খেলোয়াড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় যা, তার স্বাভাবিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
দলে এতজন কিপার থাকাটা আনন্দের না হয়ে বিষাদ হয়ে ওঠা নিয়ে মাশরাফী লিখেছেন, ‘সোহান সম্ভবত দলের সেরা কিপার। সঙ্গে লিটন, এক সিরিজ পর যোগ হলো মুশফিক। এক দলে এত কিপার, এ তো আনন্দের। তা না হয়ে, বের হয় বিষাদ। এতটুকু সামাল দিতে না পারলে তো সমস্যা, যা এক পর্যায়ে দলের ভিতর অদৃশ্য এক বাজে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। আমি শুধু ভাবছি এতে কি সোহানের জন্যও খুব ভালো হলো, যে দুই ম্যাচে সব দেখিয়ে টিকে থাকতে হবে, তাহলে বিগত দুই সিরিজ সে যা করল, তার কি হবে! লিটন কি বলবে? এখনও তো কিপিং ভুলেই যাবে। মুশফিক কে পারফর্ম করতে হবে ১৬ বছর খেলার পর, এটা বলে দেওয়ার কিছু নাই। সে খুব ভালো করেই জানে। বরং বাহিরে এভাবে বললে, তার নিবেদনকে অসম্মানিত করা হয়, যা তার প্রাপ্য নয়। সে সেরা ব্যাটসম্যান বলেই ১৬ বছর দেশকে সার্ভিস দিয়েছে। আবার দলের প্রয়োজনে তাকেই কিপিং করতে হতে পারে। তখন যদি সে ‘না’ বলে, সেটা কি ভালো শোনাবে? দলে প্রতিযোগিতা সব সময় দলের সেরাটা বের করে আনে, তবে সেটা সুস্থ হতে হবে। কাউকে আঘাত করে নয়।’