সাইদ সাজু, নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি রবি মৌসুমে রাজশাহী জেলার প্রায় দুই হাজার কৃষকের মধ্যে ২৫০ গ্রাম করে পেয়াঁজ বীজ প্রণোদনা হিসাবে অগ্রাহণ মাসের শুরুতেই বিতরণ করা হয়েছিল কৃষি অধিদপ্তর থেকে। পেয়াঁজের বাজার কয়েক বছর ধরে বেশ চড়া। তাই সরকারের দেয়া বিনামূল্যের পেয়াঁজ বীজ পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলেন কৃষকেরা। বীনা খরচে প্রণোদনার বীজ বোপন করে ১০ শতক জমিতে পেয়াঁজ চাষাবাদ করা যাবে এমন আশায় মনে স্বপ্ন বুনছিলেন কৃষকেরা।
কিন্ত বোপন করা বীজের চারা বের হয়নি। তাই তাদের পেয়াঁজ চাষে স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেসে কৃষকের। আর গচ্ছা যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
চাষীরা বলছেন,প্রণোদনার পেয়াঁজ বীজ কৃষকদের যেটা দেয়া হয়েছে সেগুলো অনেক বছরের পুরোনো ও নিম্নমানের সে কারণে বীজ বোপন করেও চারা বের হয়নি। কৃষকদের মধ্যে বিতরণের আগে বীজের মান পরীক্ষা করে দেয়া উচিৎ ছিল। কিন্ত কৃষি বিভাগ তা করেনি।
তাই বরেন্দ্র অঞ্চলে রবি মৌসুমে যে পেয়াঁজ চাষ হতো তা এ বছর আর হবে না। ফলে উৎপাদন কমে যেতে পারে।
এ গল্প ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের কৃষি প্রণোদনা ও পূর্ণবাসন কর্মসুচির আওতাই বিনা মূল্যে প্রথম দফায় বীজ বিতরণের।
প্রথম দফা বীজ বের হয়নি নিম্নমানে। তবুও পেয়াঁজ উৎপাদন বাড়াতে রাজশাহী জেলার কৃষকদের মধ্যে একই অর্থ বছরে আরো তিন হাজার ২০০ জনকে চলতি মাসে ৭৫০ গ্রাম করে পেয়াঁজ বীজও সার বিতরণ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। কিন্তনিম্নমানের বিনামূল্যে বীজ নিতে অনেকটা অনেহা দেখা দিয়েছে চাষী পর্যায়ে।
কৃষকেরা বলছেন, প্রথম দফা বীজ নিম্নমানের বোপন করে চারা বের হয়নি। তাছাড়া চারা বোপনের সময় পার হয়ে গেছে তাই এ বছর পেয়াঁজ চাষাবাদ করা আর হবে না বলে অনেক কৃষক বীজ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আর যারা দ্বিতীয় দফায় ৭৫০ গ্রাম করে বীজ নিয়েছেন তারাও এখন পর্যন্ত বোপন না করে বাড়িতে রেখে দিয়েছেন।
মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চটপট স্বীকার করে বলছেন,চলতি বছর প্রণোদনার পেয়াঁজ বীজ নিম্নমানেরও পুরোনো। প্রথম দফা বীজ ২০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত চারা হয়েছে। এজন্য দ্বিতীয় দফার পেয়াঁজ বীজ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা কৃষকেরা। এছাড়াও চারা বোপনের সময় পার হয়ে গেছে। এমন সব তথ্য কৃষি বিভাগের অর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে,২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কৃষি প্রণোদনা ও পূর্ণবাসর কর্মসূচির আওতাই বিনামূল্যে কৃষক পর্যায়ে মুসুর,সরিষা,গম,খেসারী,চিনা বাদাম,চমেটো মরিচ ভূট্টা মুগ সূয্যমুখি ও পেয়াঁজ বীজ প্রায় ৮১ হাজার ৯৭৫ জন কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম প্রর্যায়ে দুই হাজার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩ হাজার ২০০ জনকে পেয়াঁজ বীজ বিতরণের কাজ চলছে।
মাঠ পর্যায়ের সরকারের প্রণোদনার কৃষকের তালিকা তৈরি করেন ইউপি সদস্য ও পৌর কাউন্সিলেরা আর তাদের সহযোগিতা করেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউপির কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন,প্রণোদনার বীজ গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সময় মত দিতে না পারাই কৃষকেরা নিতে চাইছেনা। আর এখন পর্যন্ত যে কয়েকজন কৃষক বিশেষ করে পেয়াঁজ বীজ পেয়েছেন তারা সময় পার হয়ে যাওয়াই বোপন না করে ঘরে রেখে দিয়েছেন।
প্রথম দফার প্রণোদনার ২৫০ গ্রাম করে পেয়াঁজ বীজ পেয়ে বোপন করেছিলেন তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার সাদিপুর গ্রামে আবুল কাশেম,মুন্ডুমালা গ্রামের বাবু ও পাঁচন্দর গ্রামের মুনসুর রহমানসহ এমন পাঁচজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছেন,সঠিক নিয়ম মেনে বীজ বোপন করা হয়েছিল। কিন্ত বীজ থেকে চারা গজায়ছে মাত্র ১০ থেকে ২০ ভাগ পর্যন্ত। ৮০ ভাগ বীজ বের হয়নি। তাই চারা রোপনের জন্য জমি তৈরি থাকলেও শুধু চারা অভাবে এ বছর পেয়াঁজ চাষ হচ্ছেনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন,পেয়াঁজ উৎপাদন বাড়াতে সরকার কোটি কোটি টাকার বিনামূলে কৃষকদের সার বীজ বিতরণ করছেন। কিন্ত সঠিক ভাবে বীজগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে ক্রয় করা বিতরণ করা ঠিক হয়নি। এখন সে লক্ষ্যে পেয়াজ উৎপাদন হবেনা। অনেক কৃষক দ্বিতীয় দফার পেয়াজ বীজ বোপনও করেনি। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা গ্চছা যাবে।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন, প্রথম দফার আমাদের বীজের যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তার থেকে চলতি বছর বীজের দাম অনেক বেশি। তাই ভাল মানের বীজ কেনা যাইনি তবুও ৪০ থেকে ৫০ ভাগ চারা বের হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্ত বরাদ্দে টাকা ফেরত যাবে কৃষকদের কথা চিন্তা সেই বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় দফা আমরা পেয়াঁজ বীজ নিতে চাইনি। কারণ প্রথম দফা বীজ নিয়ে কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে। সময়ও শেষ পর্যায়ে কিন্ত কৃষি মন্ত্রলায় নিদের্শে আবার ও বিতরণ করা হয়েছে। এতে কৃষকেরা বীজ বোপন করতে পেরেছেন কিনা তা মাঠ পর্যায়ে দেখা হচ্ছে।