
জানা গেছে, গত রোববার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার আলীপুর বাজারে পানের আড়তে চুরি করা পান বিক্রি করতে যায় রানা হামিদ নামের ওই যুবক। খবর পেয়ে উজালখলসী গ্রামের পানচাষী মাহফুজুর রহমান বাবু আড়তদারদের সহযোগিতায় পানচোর রানা হামিদকে খোয়া যাওয়া পান সহ হাতেনাতে আটক করে। পরে খবর পেয়ে কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ রাকিবুল আলীপুর বাজারে যায় এবং রানা হামিদকে ধরে নিয়ে গিয়ে পরিষদে আটকে রাখে। এদিকে, পুলিশের হটলাইন ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে দুর্গাপুর থানার এস আই নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌছালে গ্রাম পুলিশ রাকিবুল এস আই নজরুলকে জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে চোরকে পরিষদে আটকে রাখা হয়েছে। পরিষদে বসে পানচুরির বিচার করা হবে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পান আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহিরুল ইসলাম বলেন, এলোমেলো অবস্থায় পান বিক্রি করতে আড়তে আসে রানা হামিদ। এরপর সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এক পর্যায়ে পানচুরির কথা স্বীকার করে রানা হামিদ। জিজ্ঞাসাবাদে পলাতক আরও দুই সহযোগির কথা স্বীকার করে আটককৃত রানা হামিদ। তারা হলেন, রাতুগ্রামের সাজেদুল ও মিঠু।
এদিকে, রোববার সকাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রাখা হয় রানা হামিদকে। ২৪ ঘন্টা ইউনিয়ন পরিষদের গার্ডরুমে আটকে রেখে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। দফারফা হওয়ায় সকালে রানা হামিদকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে চোর পালানোর নাটক সাঁজানো হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ বাক্কার আলী বলেন, দিনে ডিউটি থাকায় সকালে বাসায় চলে যান তিনি। এরপর দফাদার সমজান আলী দায়িত্বে ছিলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিষদের দফাদার আলীমুদ্দিনও ছিলেন পাহারার দায়িত্বে। প্রতিবার চোর ধরে বিচারের নামে প্রহসন করা হয়। সারাদিন সারারাত আটকে রাখার পর পালানোর নাটক সাঁজিয়ে সেই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। হতে পারে সে চোর কিন্তু দেশের একজন নাগরিক। একজন সাধারণ নাগরিককে বিচারের নামে ২৪ ঘন্টা আটকে রাখার বিধান আছে কিনা খতিয়ে দেখা উচিৎ।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। স্থানীয় ইউএনও’র সাথে কথা বলে বিষয়টি খোঁজ নেবো।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আনারুল ইসলাম বলেন, পরিষদ থেকে চোর পালিয়েছে বলে শুনেছি। ঘটনাটি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। এর বেশি আমার জানা নেই।
গ্রাম পুলিশ রাকিবুল হাসান জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই ওই চোরকে আলীপুর থেকে পরিষদে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সোমবার সকালে দুই গ্রাম পুলিশকে মারধোর করে পরিষদ থেকে পালিয়ে যায়। চোর কিভাবে পালালো তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন চেয়ারম্যান।
ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঘটনার কথা পুরোটাই অস্বীকার করে বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে রাজশাহীতে অবস্থান করছিলাম। চোর ধরা ও ছাড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
প্রায় তিন মাস আগে মাছ চুরির অভিযোগে উজালখলসী গ্রামের চিহ্নিত চোর বেলাল সরকারকে ধরে ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রাখা হয়। বেলালের নামে চুরি ছিনতাই সহ থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। পুলিশ ওইদিনও গেলে পুলিশকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ উঠে ইউপি সদস্য মাহাতাব আলীর দায়িত্বে গ্রাম পুলিশ রাকিব বেলালকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে বেলালকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে জরিমানার টাকার হদিস মেলেনি আজও।