নওগাঁয় আড়াই হাজার মানুষ পানিবন্দী ২ হাজার বিঘা জমি ফসল নষ্ট


নওগাঁ প্রতিনিধি:  টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদের ৪টি স্থানে, রাণীনগরে ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি ও কৃষ্ণপুর নামক স্থানের এবং আত্রাই উপজেলার নন্দনালী রান্দাইখাড়া গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে  প্রায় ২৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ২ হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত।

এছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা ঝঁুিকপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভরে আটকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। রাস্তার ওপর অবস্থান নিয়েছেন পানি বন্ধি কয়েক হাজার মানুষ।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, গত রোববার সকাল থেকে আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত এ নদীর পানি বেড়ে এখন আত্রাই নদীর শিমুলতলী পয়েন্টে বিপদসীমার ১২০সেন্টিমিটার, মহাদেবপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৫সেমি ও জোতবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪০০ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০০ পরিবার।

উপজেলার পারনুরুল্লাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, দীর্ঘ দিনের পুরোনো এই বেড়িবাঁধটি সংস্কার না করার কারণে প্রতিবছর বেড়িবাঁধ বিভিন্ন স্থানে ভেঙে  গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে করে পরিবারের লোকজনসহ গরু-ছাগল নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিভিন্ন ফসলের খেত তলিয়ে যায়। তাই আমরা এই বেড়িবাঁধটির নির্মাণের দাবি করছি।

নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি হওযায় এ ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, সোমবার রাত ২টার দিকে বাইবুল্যা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের ৩০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বিষ্ণুপু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম গোলাম আজম বলেন, কয়লাবাড়ী বেড়িবাঁধের ভাঙন স্থানটি মেরামত না করায় ওই স্থান দিয়ে পানি অনায়াসে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২০০ পরিবার। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে অন্তত ৩০০ বিঘা জমির আমন ধানের খেত।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, নদী তীরবর্তী ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এলাকা ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করছেন। দু-এক দিনের মধ্যে ক্ষতির পুরো তথ্য জানা যাবে।’

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, এরই মধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভর্তি করে মেরামতের কাজ চলছে। প্লাবিত এলাকা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন বেরিবাঁধের আর কোথাও যেন নতুন করে ভেঙ্গে না যায় এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দ্রæত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা নিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া অংশে বস্তায় বালি ফেলে বন্ধ করার কার্যক্রম চলছে। আমি আশাবাদি নদীর পানি কমতে শুরু করলে এলাকার আর কোথাও ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।