নওগাঁয় ১৬টি ইউনিয়নের দেড়শত গ্রামের প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী


নওগাঁ প্রতিনিধি: তৃতীয় দফায় নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনিত হয়ে রানীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় দেড়শত গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। রানীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৭টি স্থানে ভাঙ্গা অংশ মেরামত না করায় ওই অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে জেলার বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনিত হয়েছে।

প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কাচা ঘরবাড়ী ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফসলের মাঠ তলিয়ে যাচ্ছে। উচু স্থানে বা বাধের উপর আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। জেলায় ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। শতশত পুকুরের মাছ ভেঁসে গেছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামান খান জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আত্রাই ও যমুনা নদীর পানি কয়েকটি স্থানে কমলেও আত্রাই নদীর পানি আত্রাই রেল ষ্টেশন পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ছোট যমুনা নদীর পানি কমে গিয়ে বর্তমানে বিদসীমার সমান্তরালে প্রবাহিত হচ্ছে।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল হালিম জানিয়েছেন এই উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ তাঁদের গৃহপালিত গবাদি পশু এবং হাঁস মুরগী নিয়ে এখনও বন্যা কবলিত হয়ে কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। বন্যা কবলিত ১ হাজার পরিবারের মধ্যে জেলা প্রশ্সাকের উদ্যোগে ১০কেজি করে চাল এবং ডাল, তেল লবন, নুডলস ইত্যাদি শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরন করা হয়েছে।

এ ছাড়াও উপজেলা প্রশ্সানের অর্থায়নে প্রায় ২ লক্ষ টাকার ত্রান সামগ্রী বন্যা দূর্গতদের মধ্যে বিতরন করা হয়েছে। আত্রাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার সানাউল ইসলাম জানিয়েছেন এই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল ও শুকনা খাবার হিসেবে চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, নুডলস ইত্যাািদ শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে আরও ২লক্ষ টাকার ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে।

রানীনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আল মামুন জানিয়েছেন এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ২ হাজার পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল ও শুকনা খাবার হিসেবে চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, নুডলস ইত্যাািদ শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে আরও ২লক্ষ টাকার ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, চলতি বন্যায় জেলায় মোট ৬ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমির আমন ধান এবং ১১১ হেক্টর জমির শাকসব্জি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বন্যা দুর্গতদের মাঝে সরকারী ভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২৫ মে:টন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। বন্যা কবলিতরা জানান, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রান সামগ্রী অপ্রতুল। এই বন্যা মোকাবেলায় আরও ত্রানসামগ্রী দেয়ার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।