নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনের মাঠ থেকে বিএনপি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মাঠ ছাড়া করতে ও ভোটারদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকরা। বিএনপি প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা, ভয়-ভীতি দেখানো ও প্রচার কাজে বাধা সৃষ্টি করে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
রোববার দুপুরে নওগাঁ শহরের কেডির মোড়ে বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান। এ সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও নওগাঁ পৌরসভার বর্তমান মেয়র নজমুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন আহমেদ ও এ্যাডঃ রফিকুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ রায়হান আখতার রনিসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক প্রমুখ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হাফিজুর রহমান বলেন, গত ১১ জানুয়ারি নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের প্রচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপির প্রার্থী ও বিএনপির নেতা-কর্মী নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বচানী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রায় প্রতিদিন নেতাকর্মীদের নিয়ে মোটর সাইকেল শোডাউন ও মিছিল করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রতিনিয়ত ধানের শীষের পোস্টার ছিড়ছে। নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর কর্মীদের নির্বাচনী এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টির প্রবণতা ততই বাড়ছে।
গতকাল শনিবার রাতে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা হামলা চালানোর অভিযোগ তুলে জেলা বিএনপির আহবায়ক হাফিজুর রহমান বলেন, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শহরের নওজোয়ান মাঠ এলাকায় সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন বিএনপির প্রার্থী নজমুল হক সনি ও তার সমর্থকরা। এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও লাঠি নিয়ে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় বিএনপির প্রার্থীসহ বিএনপির ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। পরে তাঁরা শহরের দয়ালের মোড় ও কালিতলা মোড় এলাকায় বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি শহরের কালিতলা সাবান ফ্যাক্টরি এলাকায় বিএনপির প্রচার কাজে ব্যবহৃত দুটি অটোরিকশা ও মাইক ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এসব বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
হাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনে বিএনপির কর্মী ও সমর্থকদের মাঠ ছাড়া করতে এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতির তৈরি করতে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের হামলা চালানো হচ্ছে। এছাড়া ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা না চালানোর জন্য বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।
বিএনপির প্রার্থী নজমুল হক সনি বলেন, প্রচারণা চালানোর সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলার মূল লক্ষ্য ছিলাম আমি। কিন্তু আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ছেলে ও কয়েকজন সমর্থক গুরুত্বর আহত হয়েছেন। হামলার পর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আমি ছাড়া পেলেও অন্যরা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের হামলার উদ্দেশ্য আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে কেউ ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়ার সাহস না করে। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারণা শুরুর পর থেকেই পৌর এলাকায় ইতোমধ্যে ভোট সন্ত্রাস শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। এটা বিএনপির নিজেদের মধ্যকার দলীয় কোন্দলনের কারণে হতে পারে। এখানে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। নির্বাচনে জেতার জন্য আওয়ামী লীগের ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য প্রয়োজন নেই।’ তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি নওগাঁ পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে নওগাঁ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নওগাঁয় নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে বিএনপি মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নজমুল হক সনির উপর অতর্কিত হামালার ঘটনায় নওগাঁ সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক ফয়সাল বিন আহসান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।