নাচোল ইউএনও’র বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ


নাচোল প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ এর প্রত্যাহার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ একাধিক ব্যক্তি। তবে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিৎ করেছেন।

অভিযোগে জানাগেছে, নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ নাচোলে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা,সাধারণ মানুষকে হুমকি ধামকিসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শিক্ষক সমাজের সাথেও অশালীন আচরনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ এ অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।তথ্যসুত্রে জানাগেছে নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নের কেন্দবোনা গ্রামের মৃতঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মেদ রেজার ছেলে মোবারক রেজা জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগলিপিতে উল্লেখ করেছেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী তার আপন ভাগ্নির জন্য মুক্তি যোদ্ধা কোটায় এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার জন্য একটি প্রত্যয়নপত্র নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যায়।

সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়েও ৫ ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয় তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রত্যয়নপত্র না পেয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরে যেতে হয় তাকে। ওই দিন ইউএনও তাকে প্রত্যয়নপত্র না দিয়ে বরং তাকে অপমান অপদস্থ করে বলে অভিযোগলিপিতে তিনি উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া নাচোল উপজেলার জোতামতি গ্রামের মৃত কশির উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি তার প্রতিবেশী মোসাঃ পারভীন ও মোসাঃ সাকিনা খাতুনকে নিজস্ব পাকা বাড়ির থাকা শর্তে গৃহহীন হিসেবে তাদেরকে ঘরবাড়ি দেয় হচ্ছে মর্মে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি ইউএনও’কে অবহিত করলে তিনি হাফিজুরকে লাঞ্চিত করেন এবং ভ্রাম্যমান আদালত করে তাঁকে জেল জরিমানার ভয়ভীতি দেখানো হয়।

ইউএনও’র এরুপ আচরণ মেনে নিতে না পারায় হাফিজুর শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কাছে বিচার চেয়ে ১টি আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগটি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে, নাচোল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (সাবেক) মতিউর রহমান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ইউএনও সাহেব একজন হিন্দু বিদ্ধেশী মানুষ। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার শ্রী আরতি বর্মনের নামে একটি সরকারি বাড়ি বরাদ্ধ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তাকে বাড়িটি নির্মাণ করে দিচ্ছেন না।

বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার আরতি বর্মনের সাথে ইউএনও যে ব্যবহার করেছেন তা একজন মানুষ হিসাবে তা করতে পারেননা বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে, নাচোলের জনৈক জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, এই ইউএনও যোগদানের পর থেকে কারো কোন কথাই ভালোভাবে শুনছেন না তিনি। তিনি বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাথে শুধু নয় এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথেও খারাপ আচরণ করেন।

এমনকি তার কার্যালয়ের নিচে একটি গোপন কক্ষে নিজস্ব হাজতখানা করে সেবা গ্রহীতাদের আটক করে শাস্তি দিয়ে থাকেন। গত ২১ফেব্রুয়ারীতে আলোচনাসভায় তিনি বীরমুক্তিযোদ্ধার আমন্ত্রন না করে ওই অনুষ্ঠানে তাঁর বীরমুক্তিযোদ্ধা পিতাকে অতিথি করে পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনাসভা শেষ করেন।

এ ঘটনায় নাচোলের প্রকৃত বীরমুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে, আদিবাসী নেত্রী শ্রীমতি নয়নতারা অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ ফব্রুয়ারি তিনি ইউএনও’র দপ্তরে একটি অভিযোগের তদন্তে অংশ গ্রহনে গেলে তাঁর দপ্তরে থাকা অন্যান্য অফিসার দিয়ে তাকে নানা রকম হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখান এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন।

এছাড়া ইউএনও শরিফ আহম্মেদ নাচোলে যোগদান করার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের ৮/১০জন কর্মকর্তাকে সব সময় সফর সঙ্গী হিসাবে নিয়ে বেড়ান। এতে করে ওই সকল দপ্তরে সেবাগ্রহীতারা সেবা তেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় দপ্তরগুলোতে বলে জানিয়ে ভূক্তোভূগিরা।

এবিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আাহম্মেদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলি করা হয়েছে তা সত্য নহে।

এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খানের সাথে মুঠোফোনে গত সোমবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে নাচোলের ইউএনওর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে যেহেতু অভিযোগ করেছেন সেটি মন্ত্রনালয়/ সচিবালয় দেখবেন।