তৈয়বুর রহমান, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি পাড়া দামপুরার কাটাপুকুর। পাড়াটিতে মুসলিমদের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় ১৫/২০ টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের বসবাস। এদের মধ্যে সাত আটটি পরিবার দীর্ঘদিন থেকে উৎপাদন করে আসছে চোলাই মদ। ওই কটি বাড়ীতে নিয়মিত বসছে মাদক সেবীদের আড্ডা। মাদক সেবীরা মাতাল হয়ে ওই পাড়াসহ পাশর্^বর্তী এলাকায় ঘটাছে সামাজিক অপরাধ।
এছাড়াও তাদের উৎপাদিক শতশত লিটার চোলাই মদ প্রতিদিন নিয়ামতপুরের বিভিন্ন জায়গাসহ সরবরাহ হচ্ছে পাশর্^বর্তী চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়। অথচ রহস্যজনক কারনে পাড়াটিতে পুলিশি নজরদারী নেই। ফলে পাড়াটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্যে।
জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলা সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটর পশ্চিমে রসুলপুর ইউনিয়নে পাড়াটি অবস্থিত। পাড়াটিতে রয়েছে মুসলিমদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কিছু পরিবার চোলাই মদ তৈরী করে বসাচ্ছে নিজ বাড়ীতে মদের আসর। এখানে অবাধ মাদক ব্যবসার কারণে এলাকার উঠতি বয়সের যুবকরা দিনদিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। উঠতি বয়সী ছেলেদের নিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
স্থানীয়রা জানাই, রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন দিক থেকে আসতে থাকে পাড়াটিতে মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীরা। মদ্যপ অবস্থায় তাদের মাতলামীতে জেগে থাকে গোটা পাড়া।
সরেজমিনে গেলে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ওই পাড়ার কিছু পরিবার নির্বিঘেœ চোলাই মদ উৎপাদন করে আসছে দীর্ঘ্যদিন থেকে। তাদের উৎপাদিত চোলাই মদ পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। অথচ নজর নেই যেন সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এই মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে নেপথ্যে থানা পুলিশের সখ্যতা থাকায় তারা এলাকায় নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদকের ব্যবসা। বর্তমানে ওই এলাকায় মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীদের দৌরাতœ এতটাই বেশী যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হাই ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সাগর জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা চোলাই মদ তৈরী করে খাওয়ার বিষয়টি থিতিল থাকলেও তারা সুযোগটি ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় হাজার লিটার মদ তৈরী করে সরবরাহ করছে বিভিন্ন জায়গায়। পাড়াতেই বসাচ্ছে মদের আসর। এ নিয়ে আশ-পাশ পাড়ায় প্রায় ঘটছে বিভিন ধরনের সামাজিক অপরাধ। উচ্ছন্নে যাচ্ছে যুব সমাজ।
সংশ্লিষ্ট রসুলপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি উত্থাপন হলেও পুলিশ পাড়াটিতে মাদক নিয়ন্ত্রনে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। ফলে তাদের প্রসার বাড়ছে দিন দিন। ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, পাড়াটিতে মাদকের কারবারের বিষয়টি তার জানা ছিলনা। এখন জানলাম। অবশ্যই মাদক নিয়ন্ত্রনে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মতিয়ার রহমান জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাদক একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ নিয়েই মোকাবিলা করছি আমরা।
এখন যতগুলো মামলা হয় এর বেশিরভাগই হয় মাদকের মামলা। তবে জোর পুলিশি তৎপরতার কারনে আগের তুলনায় এটা এখন অনেকটা কম। আমাদের মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং এটি আরো জোরদার করা হবে। খোঁজ খবর নিয়ে খুব শীঘ্রই পাড়াটিতে মাদক নিয়ন্ত্রনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।