মৃণাল সেনের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন টলিউডের সৃজিত মুখার্জি। নাম দিয়েছেন ‘পদাতিক’। যেখানে এই নির্মাতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের চঞ্চল চৌধুরী। ২ নভেম্বর সেই ছবিটি প্রথমবার প্রদর্শিত হলো লন্ডন ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। যেখানে অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন সৃজিত ও চঞ্চল। তাদের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে ওই উৎসবে ছিলেন ঢাকাই অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণও। সুযোগটি মিস না করে একসঙ্গেই ছবিটি দেখলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘গতকাল (২ নভেম্বর) বার্মিংহামে দেখে ফেললাম ‘পদাতিক’। মজার ব্যাপার হলো আমার প্রথম ছবি ‘আরো এক পৃথিবী’-এর প্রমোশনের জন্য যখন আমি কলকাতা যাই, তখন চঞ্চল ভাই ‘পদাতিক’-এর শুটিং করছিলেন। সত্যিই জীবন একটা সার্কেলের মতো।’’ বোঝালেন, ঢাকার মেয়ে হয়েও ঘুরে ফিরে কলকাতা হয়ে লন্ডনে দেখা হয়ে গেলো তাদের।
কিন্তু সিনেমাটা কেমন হলো? এমন অ্যাঙ্গেল থেকে ফারিণ বলেন, ‘সৃজিত দার আরেকটি পরিশীলিত কাজ এটি। যেখানে মৃণাল সেনের শুধু জীবন নয় বরং তাঁর পরিচালনার ধরন, সিনেমা, দর্শন, আদর্শ সবকিছুর মেলবন্ধন ঘটেছে। সেই সাথে কোথায় যেন নিজের বিবেকের মুখোমুখি হতে হয়। আয়নায় নিজ প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে।’
মৃণাল সেনের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ফারিণ। বললেন, ‘এটা চঞ্চল ভাইর আরেকটি গ্রাউন্ড ব্রেকিং পারফরম্যান্স। এমন তীক্ষ্ণ অভিনয় সচরাচর মেলে না। পুরো টিমকে সাধুবাদ। ছবিটি নতুন বছরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে, অথচ আমার তর সইছে না।’
গত ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ৪ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের চারটি শহর লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার ও লিডসে চলছে লন্ডন ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। বার্মিংহামের ‘রিজেন্ট স্ট্রিট সিনেমায় হয়েছে ‘পদাতিক’-এর এই প্রদর্শনী।
‘পদাতিক’ এবং মৃণাল সেনকে নিয়ে চঞ্চল আগেই বলেছেন, ‘শুধু দেখতে একরকম হওয়া একটি বায়োপিকের জন্য যথেষ্ট নয়, বিশেষ করে মৃণাল সেনের মতো একজন কিংবদন্তির ক্ষেত্রে। আমার চেষ্টা ছিল তার ভেতরকার অনুভূতি ধারণ করার। সেই চ্যালেঞ্জটা আমি নিয়েছি। মানুষ হয়তো মৃণাল সেনের ছবি দেখেছেন, জেনেছেন। কিন্তু তার জীবনাদর্শ জানেন না। মানুষের কাছে সেই অজানা বিষয়গুলো তুলে ধরাই আমাদের দায়িত্ব ছিল।’
মৃণাল সেন নির্মিত ‘পদাতিক’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে। সেই একই নামে তার বায়োপিক নির্মাণ করছেন সৃজিত মুখার্জি। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি মৃণাল সেন দ্বারা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্রকারকে সৃজিতের ভাষ্য, ‘একজন ভারতীয় নির্মাতা হিসেবে তার অনেকগুলো দিক ছিল। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি প্রযোজকদের সঙ্গে বাজেট বাড়ানো নয়, বরং কমানোর জন্য তর্ক করতেন। কারণ তিনি জানতেন, বাজেট বাড়লে কাজের মধ্যে প্রযোজকের হস্তক্ষেপও বাড়বে। তিনি একটা ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন এবং শুটিং প্রক্রিয়া খুব স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। আমি যখনই কলকাতা বা ভারতের কোনও শহরে শুটিং করি, তখন যেন মনে মনে মৃণাল সেনকে উদযাপন করি।’
এই সিনেমায় মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কলকাতার মনামী ঘোষ।