পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শিম চাষি হান্নান, আমিরুল, নুরুল, হাফিজুর, মানিক সহ অনেকের সাথে কথা হয় তারা বলেন, আগাম জাতের অটোশিম চাষ করে আমরা অনেক লাভবান হচ্ছি। সাপ্তাহে প্রতি ক্ষেত থেকে ২০-২৫ ও ৩০ কেজি করে অটোশিম তুলে বাজারে বিক্রি করছি।
তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আগাম উঠা এ শিম। বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২০২ টাকা খেকে ২০০ টাকা। ভাল দাম পাওয়ায় শিম চাষিরা খুশি হলেও নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা চড়া দামে অখুশি।
এসময় শিম উঠলে ভাল দাম পাওয়া যায়। তাই আটঘরিয়াতে চাষ বেড়েছে আগাম জাতের শিম। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অটো শিম’। এ জাতের শিম চাষে এখানকার কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হন। এরই মধ্যে গাছে শিম ধরা শুরু হয়ে গেছে।
শিম শীতকালীন সবজি হলেও এ এলাকায় ৮-১০ বছর ধরে আগাম জাতের শিমের আবাদ হচ্ছে। ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে শিমের ফলন শুরু হয়।
প্রতি বছরই চাষিদের লাভ হয়। আগাম শিমের বাজারে চাহিদা বেশি থাকে দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে এ শিম উৎপাদনে চাষিদের খুবই পরিশ্রম করতে হয়। এ শিমের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া অতি বৃষ্টি ও অতি খরার কারণে শিমের ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকার পরই চাষিরা বাজারে উঠেছে নতুন এসব শিম।
সরেজমিনে দেখা যায়, অটো জাতের শিম গাছ এরই মধ্যে মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। তাই গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আটঘরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা। এরিমধ্যে আগাম শিম বাজারে তুলেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষ শুরু করেন চাষিরা। ভাদ্রের প্রথম দিকে বাজারে তোলা হয়।
জানা যায়, এক যুগ ধরে এখানে অটো শিমের আবাদ চলছে। ফলন ভালো ও কৃষকরা লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে। এ শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পান এখানকার চাষিরা। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজারও।
আটঘরিয়া পৌরসভার জালালের ঢাল গ্রামের শিম চাষি হান্নান
বলেন, আগাম জাতের অটো শিম চাষ করে এখানকার কৃষকরা বেশ লাভবান হয়। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে অটো শিমের আবাদ করেছি। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ থাকবে।
আমার মতো অনেক কৃষক আগাম অটো শিমের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন শিম গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। ফুল থেকে শিমের ফলনও শুরু হয়ে গেছে। শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে শিম বাজারে তুলতে পারলেই ২০২-২০০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
একই এলাকার নুরুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, দুলাল মৃধা
বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে অটো শিমের আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। অন্য ফসলের চেয়ে শিমের আবাদে খরচ বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হয়।
ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমির শিম ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। বাজারে প্রথম যে শিমগুলো উঠে সেগুলোর দাম বেশি থাকে। প্রথম অবস্থায় ২০০ টাকা কেজি বা তার চেয়ে বেশি থাকে বিক্রি করা যায়।
উপ-সহকারীর কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল হক বলেন, অটো-রূপবান-ঘৃত কাঞ্চন-রূপসী নামে আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। অটো জাতের শিম জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আবাদ শুরু হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ বলেন, আটঘরিয়ায় জ্যৈষ্ঠমাসের শুরুতেই আগাম জাতের শিমের আবাদ শুরু হয়েছিল। এবছর আটঘরিয়া উপজেলায় মোট ১৫০০ হে: জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মাজপাড়া ইউনিয়নে ১২০০ হে, চাঁদভা ইউনিয়নে ২৫০ হে, দেবোত্তর ইউনিয়নে ৫ হে:, একদন্ত ইউনিয়নে ১০ হে, লক্ষীপুর ইউনিয়নে ১৫ হে জমিতে অটোশিম, চকলেট শিম, রুপবান শিম, ইপসাশিম-১ জাতের শিম আবাদ হয়।
সেসব শিম গাছ ফুলে ভরে গিয়ে শিম উঠতে শুরু হয়ে গেছে। দেশের সবচেয়ে বেশি শিমের আবাদ হয় এ উপজেলায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে আগাম জাতের যে শিম পাওয়া যায়। সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করে কীভাবে আগাম শিম উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।