পাবনায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার


পাবনা প্রতিনিধি : আমাদের ও শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে পরিবার, স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের কারণে মানুষ চলে যাচ্ছে এক অজানা জগতে। মুঠোফোন ও কম্পিউটার অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের করে তুলছে অলস, সহিংস, হতাশাগ্রস্ত।
ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম হারাচ্ছে ধৈর্যশীলতা, সহনশীলতা এবং বোধবুদ্ধি। সমাজের মানুষ বিশেষত তরুণ ও শিক্ষার্থীদের এ পথ থেকে ফেরাতে পাবনার বেড়ার শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন গড়ে তুলেছে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার।
ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পাবনার বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুর আলীর অর্থায়নে নির্মিত ব্যতিক্রমী এই শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি।
ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি তিন চাকাবিশিষ্ট একটি ভ্যানে নির্মিত হয়েছে। চলতি বছরের ১৭ আগস্ট প্রায় ৭০০ বই নিয়ে পথ চলা শুরু করে। পাঠাগারটি ৭ দিন করে উপজেলার প্রতিটি স্কুলে থাকবে এবং ওইখানের শিক্ষার্থীরা এর দায়িত্বে থাকবে।
পাঠাগার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এটা স্কুলের টিফিনের সময় খোলা হয়। শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় হলেই চলে আসে পাঠাগারে পছন্দমতো বই নিয়ে যায় ক্লাসে। টিফিন শেষ হওয়ার ঠিক ৫ মিনিট আগে এই বইগুলো আবার ফেরত দিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা খাতায় নাম ঠিকানা লিখে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগও পাবে। ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটিতে গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প, ইসলামিক, শিশুতোষ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বই রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার আলহেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় তাদের ইচ্ছামতো বই নিয়ে দাঁড়িয়ে বা ভবনের বারান্দায় বসেই বই পড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষর্থী ভ্রাম্যমাণ এই পাঠাগারের বই পড়েন।
আলহেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা জান্নাত বলেন, আমি আলহেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটির দায়িত্বে আছি। এই সপ্তাহে আমাদের স্কুলে পাঠাগারটি থাকায় টিফিনের সময় হলে আমি পাঠাগারের পর্দাটি সরিয়ে দেই। তারপর সবাই সবার পছন্দের বই সংগ্রহ করে পড়া শুরু করে।
বেড়া বি বি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু সালেক ও সৌরভ বলেন, পড়ার ফাঁকে অবসর সময় মোবাইল ব্যবহার করেছেন বা বাইরে আড্ডা দিত। এখন পাঠাগার থেকে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ে অনেক কিছু শিখেছেন।
এখন আর বাইরে সময় নষ্ট না করে বই পড়েন। তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ছেন। তা থেকে জাতির পিতার প্রতি সম্মানটা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে তাদের। এই জন্য তারা শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনকে ধন্যবাদ জানান।
সাঁথিয়ার জোড়গাছা ডিগ্রি কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জালাল উদ্দিন বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষা। আর পাঠাগার হচ্ছে সুশিক্ষা বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম। শিক্ষা বিস্তারে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় পাঠাগার স্থাপন হওয়া দরকার।
পাঠাগার একটি সুস্থ বিনোদনেরও জায়গা। একটি তথ্যনির্ভর ও আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্মকে বইপড়ায় সম্পৃক্ত করতে পারলে সমাজ পরিবর্তন করা সহজেই সম্ভব। শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার করে যে কাজটি করে যাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এই পাঠাগারের কারণে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তার হচ্ছে। সংগঠনটিকে ধন্যবাদ জানচ্ছি। সেইসঙ্গে তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মেহেরাব হোসেন (জিম) বলেন, গল্প হোক বইয়ের সঙ্গে এই স্লোগান সামনে রেখে আমাদের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি করা। আমাদের শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়মূলক কাজ করে যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী স্যারের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের খারাপ মাদকের নেশা, মোবাইল গেমিং থেকে দূরে রাখতে আমাদের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের উদ্যোগ নেওয়া। আশা করি পাঠাগারটি সফলতার মুখ দেখবে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. সবুর আলী বলেন, ইতোমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমরা আরেকটি এমন পাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।
এক সময় একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি গল্পের বই পড়ে অথবা খেলাধুলা করে সময় কাটত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। এখন সে জায়গা দখল করে নিয়েছে স্মার্টফোন।
আবার অনেক শিক্ষার্থী মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। নতুন প্রজন্মকে এই পথ থেকে ফেরানোর একটাই উপায় বই পড়ানো। বই নতুন প্রজন্মকে আলোর পথ দেখায়। আশা করছি পাঠাগারটি আলোর মুখ দেখবে।