পাবনা প্রতিনিধি : ক্রেতা সমাগমে জমে ওঠা হাংরি পাবনার আয়োজনে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে খাদ্য ও পণ্য মেলা সমাপ্ত হয়েছে রোববার (২৭ নভেম্বর)। সপ্তাহব্যাপী এই মেলায় প্রায় কোটি টাকার খাদ্য ও পণ্য বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। রোববার মেলার সমাপনী দিনে মেলায় অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী শিল্প উদ্যোক্তা কবি সোহানি হোসেন, সাংবাদিক উৎপল মির্জা, চেম্বার সম্পাদক আলী মুর্তজা বিশ্বাস সনী প্রমুখ।
ব্যতিক্রমী এই মেলার আয়োজনে ভোজন প্রিয় নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সমাগমে মেলা প্রাঙ্গণ ছিলো উৎসবমুখর। তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এই খ্যাদ্য ও পণ্য মেলাতে বেঁচা বিক্রিও বেশ ভালো হয়েছে। ই-কামার্স অনলাইন ভিত্তিক এই ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা (অফলাইনে) সরাসরি ক্রেতার কাছে পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই মেলায়। এক সপ্তাহের মেলাতে প্রায় কোটি টাকার খাদ্য ও পণ্য বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
চিরাচায়িত গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে খাবারের কথা উঠলেই মনে করিয়ে দেয় শীতের পিঠাপুলির কথা। চলমান এই শীতের মাসে কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করেছে নতুন শস্য। নবান্নের আনন্দে ঘরে ঘরে চলছে নানা ধরনের খাবারের স্বাদ গ্রহণ। সেই গ্রাম বাংলার পিঠা উৎসব এখন আধুনিকতায় রুপ নিয়েছে। জেলার নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে হাংরি পাবনা নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ পেজের সদস্যদের অয়োজনে চলে খাদ্য ও পণ্য মেলা।
করোনা মহামারির সময়ে কর্ম হারানো আর নতুন উদ্যমী সাহসী নারীরা ঘরে বসে শুরু করেছিলেন এই ব্যবসায়ীক কার্যক্রম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন সেই সাহসী নারীদের মধ্যে বেশিরভাগই হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। ঘরে বসে (ই-কমার্স) ফেসবুক পেজে অনলাইনের মাধ্যমে নিজের প্রচেষ্টা আর গ্রুপ পেজের সহযোগিতায় এখন তারা স্বাবলম্বী।
জেলার এই রকম ৩৬ জন সফল নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে এবারের এই খাদ্য মেলার আয়োজন। এবারের মেলাতে ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনেছেন, আবার কেউ অডার করে মেলা মাঠে বসেই নিয়েছেন খাদ্যের স্বাদ। প্রতিদিন মেলায় আগত দর্শক ও ক্রেতাদের জন্য ছিলো নানা ধরনের খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা।
অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তাদের এখন চাওয়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে সারা দেশে এই খাদ্য ও পণ্য মেলার আয়োজন করতে চান তারা।
মেলার উদ্যোক্তা দেওয়ান মাহাবুব বলেন, সমাজ সেবার অংশ হিসেবে পিছিয়ে পড়া নারীদের সম্মুখে এগিয়ে নেয়ার অন্যতম মাধ্যম হাংরি পাবনা। আমাদের সদস্য সংখ্যা এখন সারা বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার। এই সকল সদস্যরা নিয়মিত আমাদের পেজের মাধ্যমে পছন্দের খাদ্যসহ পোষাক ক্রয় করছেন। আমরা অর্থ দিয়ে এই মেলার আয়োজন করে অসছি। সরকারি সহযোগিতা দরকার আমাদের। চাকুরীর পিছে না ছুটে ব্যবসা করে এখন নারীরা দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে চলতে হয়।
শুধু দেশের মধ্যে নয়, বিদেশেও আমাদের খাদ্যসহ সকল পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করতে চাই। তাই মেলার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য সামগ্রী। বেঁচা-বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের মেলাতে প্রায় কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়।
শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে চলতি মাসের ২২ নভেম্বর উদ্বোধন হয় এই মেলার কার্যক্রম। মেলাতে সর্বমোট ৩৬টি স্টল বসে। ২৩টি স্টলে দেশি-বিদেশী নানা ধরনের মুখরোচক ঘরে তৈরি খাবারসহ ১৩টি স্টলে ছিল বাহারী পোশাকের সমাহার। জেলায় ব্যতিক্রমী এই খাদ্যমেলাতে ভিড় করেন নানা বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার ক্রেতা ও দর্শক।
মেলাতে স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি, দেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার, চিকেন ফ্রাই, নানা স্বাদের কেক, সামুদ্রিক মাছ, আচার, হারবাল ও অর্গানিক প্রসাধনী সামগ্রীসহ শীত গ্রীষ্মের পোশাক বিক্রি হয়েছে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই মেলার কার্যক্রম। মেলাকে প্রাণবন্ত করতে প্রতিদিন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নিজেদের তৈরি দেশি পণ্য নিয়ে ফ্যাশন শো।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ফেসবুক গ্রুপ পেজের মাধ্যমে নারীদের নিয়ে এই হাংরি পাবনার যাত্রা শুরু হয়।