পাবনায় তরুণকে হত্যা, পুত্রশোকে মায়ের মৃত্যু


পাবনা প্রতিনিধি : পাবনায় মিথ্যা অপবাদে জরিমানা করে তা দিতে না পারায় এক তরুণকে কীটনাশক খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে পাবনায় মিথ্যা অপবাদে জরিমানা করে তা দিতে না পারায় এক তরুণকে কীটনাশক খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

সন্তান হারানোর শোক সইতে না পেরে ঘটনার এক দিন পরে মারা গেছেন ওই তরুণের মা। ঘটনার বিচার চাইলেও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার অভিযোগ শোকার্ত ওই পরিবারের। পাবনার সদর উপজেলার চর আশুতোষপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতের নাম সবুজ হোসেন। তিনি ওই গ্রামের আব্দুস সালাম ফকিরের ছেলে।

নিহতের স্বজনরা জানান, সবুজের সঙ্গে একই গ্রামের এক নারীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে- এমন অভিযোগে সালিসের আয়োজন করেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবু সাঈদ। কোনো প্রমাণ ছাড়াই সালিসে সবুজকে দোষী সাব্যস্ত করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সে টাকা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে জোরপূর্বক সুদে টাকা ধার নিতেও বাধ্য করেন সাইদ মেম্বার। নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারায় গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে সবুজকে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক কীটনাশক খাইয়ে হত্যা করেন সাইদ ও তার সহযোগীরা।

এদিকে, পুত্র হত্যার শোক সইতে না পেরে এক দিন পর ৩১ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান মা আনোয়ারা খাতুন (৫০)। নিহত সবুজের বাবা আব্দুস সালাম ফকির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে কারো অনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ভাই-বোনের সম্পর্ককে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাইদ মেম্বর তাকে সালিসে জরিমানা করেন। জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নিয়ে টাকা দিতে চাপ দেন।

 

২৯ ডিসেম্বর রাত ১১টায় বাড়ি থেকে ডেকে গলায় ছুরি ধরে তাকে কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) খেতে বাধ্য করে। বাড়ি ফিরে এ কথা জানিয়ে আমার হাতের ওপরই ছেলে মারা যায়। ছেলে হারানোর শোকে আমার স্ত্রীও মারা গেছে। আমার আর বেঁচে থেকে কী লাভ?’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

হত্যার অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র দাবি অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় মুরুব্বি গ্রামবাসীর মতামতের ভিত্তিতেই সালিসের রায় ও জরিমানা হয়েছে। তবে, টাকা আদায়ে কোনো চাপ দেয়া হয়নি। সে কীভাবে মারা গেছে তাও আমার জানা নেই।’

নিহতের চাচা সুরুজ দেওয়ান অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর আমরা বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সবুজকে সাইদ মেম্বর হত্যা করেছে। এটি কোনোভাবেই অপমৃত্যু নয়। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

পাবনা সদর থানার ওসি নাসিম আহমেদ বলেন, মামলা না নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পরিবার থেকে হত্যা মামলা দেয়া হয়নি। অপমৃত্যু মামলা দায়েরের পর ময়নাতদন্ত হয়েছে। এতে হত্যার প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।