
এসব এলাকায় প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌচাষিরা মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে মধু সংগ্রহ শুরু হবে।
চলনবিল এলাকার মাঠগুলোতে এখন সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। হলুদ ফুলে নেচে নেচে, ছুটে ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে মৌবাক্সের মৌমাছিরা।
জানা গেছে, প্রতি বছর পৌষ মাসে চলনবিল এলাকার মাঠগুলো হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে যায়। জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ এলাকার কৃষকরা উদ্বৃত্ত ফসল হিসেবে মাঘী সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। মাঘ মাসে সরিষা তুলে এসব জমিতে বোরো চাষ করেন তারা। এ বছর অগ্রহায়ণের শেষে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার
মৌখামারিদের পাশাপাশি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মৌখামারি মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠগুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে সরিষা খেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মৌচাষি রফিকুল ইসলাম ১১ বছর ধরে মৌচাষ করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি চাটমোহরের নিমাইচড়া মাঠের সরিষা ক্ষেতের পাশে ১৩০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন।
রফিকুল ইসলাম জানান, এখনো মধু সংগ্রহ শুরু হয়নি। দু-চার দিনের মধ্যেই মধু সংগ্রহ শুরু করবেন তিনি। আশা করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত পাঁচ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন তিনি। মধুর পাইকারি ক্রেতারা এখনো মধু কিনতে মাঠে নামেননি।
পাবনা মৌচাষি সমবায় সমিতির সভাপতি ও উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় দেড় লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কে কোথায় মৌবাক্স স্থাপন করবে, এ জন্য খামারিদের এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়। গত বছর এক লাখ বিশ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল।
অপরিশোধিত মধু ছয় হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছিল। এ বছর এখনো মধু বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি, চলতি মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে দুই হাজার টন মধু উৎপাদন হবে। সে হিসেবে চলনবিল এলাকায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করায় সরিষার ভালো পরাগায়ন ঘটবে। এর প্রভাবে সরিষার উৎপাদনও বাড়বে।