যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে (ক্যাপিটল বিল্ডিং) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্রবাদী সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্বনেতারা বলেছেন, সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বুলি আওড়ানো ট্রাম্প নিজ দেশের গণতন্ত্রকেই ধুলায় মিশিয়েছেন।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দিতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্প সমর্থকরা হামলা চালায়। নজিরবিহীন ওই ঘটনায় অধিবেশন সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায়। পরে পুলিশের ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হলে আবারও শুরু হয়ে অধিবেশন। ওই হামলার ঘটনায় গুলিতে এক নারী ও পরে হাসপাতালে আরও তিনজন নিহত হয়।
মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প-সমর্থকদের চালানো তাণ্ডবকে বিশ্বনেতাদের অনেকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘গণতন্ত্রের ওপর আঘাত’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। একইসঙ্গে তারা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পার্লামেন্ট ভবনে হামলাকে ‘অসম্মানজনক দৃশ্যের’ অবতারণা বলে নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইটারে লিখেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের পাশে দাঁড়ায়। এখন দেশটিতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতার হস্তান্তর হওয়া জরুরি।’
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পাশাপাশি ট্রাম্প-সমর্থকদের সহিংসতার সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন অন্য ব্রিটিশ রাজনীতিবিদেরাও। যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার বলেছেন, এটি ‘গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি হামলা’। আর স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওন টুইট করেন, ক্যাপিটল হিলের দৃশ্য ‘একেবারে ভয়ানক’।
উল্লেখযোগ্য বক্তব্য দিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার সরকার। দেশটি বলেছে, এ ঘটনায় এটাই ফুটে উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র তার আগ্রাসনের নীতি দিয়ে দেশে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে, আজ তারাই সেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো ম্যাস বলেন, ‘ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের মার্কিন ভোটারদের রায় শেষমেশ মানতেই হবে এবং গণতন্ত্রকে পদদলিত করা থামাতে হবে।’
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন, বাইডেনের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করবে, সে বিষয়ে তিনি আস্থাবান। আর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, তিনি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষা করছেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা ড্রায়ান ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এটি গণতন্ত্রের ওপর বড় হামলা।’
‘সহিসংতা কখনো জনগণের ইচ্ছার ওপর জয়ী হবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে গণতন্ত্র অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। আর এটা হবেই’, এভাবেই টুইটারে নিজের দুঃখ ও অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এছাড়া ট্রুডোর পাশাপাশি তার দেশের নাগরিকেরাও ‘গণতন্ত্রের ওপর হামলার ঘটনায় ভীষণ অস্বস্তি ও দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বলেন, ‘মার্কিন গণতন্ত্রের শক্তিশালী অবস্থার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবেন।’
উত্তর আটলান্টিক ভিত্তিক সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ নেতাদের নিন্দায় শরিক হয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা দেখাতে হবে।
পার্লামেন্টে হামলার নিন্দা জানিয়ে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, এটি একটি বিরক্তিকর দৃশ্য। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।
ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি সংযম ও সাধারণ জ্ঞান প্রদর্শনের আহ্বান জানান। খবর দ্য গার্ডিয়ান।-ব্রেকিংনিউজ/