পুঠিয়ার কার্ত্তিকপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক মন্দিরের জায়গা দখল ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ


পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়ার কার্ত্তিকপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক মন্দিরের জায়গা দখল ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে পুলিশিং কমিটি, স্থানীয় চেয়ারম্যান, থানায় জিডি করেও কোন সুফল পাইনি সেই পরিবার। ভূমি দস্যুদের হুমিতে চরম আতংকে দিন পার করেছে তারা। তাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সেই পরিবার ও এলাকাবাসী।

জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বদোপাড়া গ্রামের মৃত নবদ্বীপ চন্দ্র সরকারের ছেলে অমিও চরন সরকার এবং অনিল চরন সরকার এর পুঠিয়া উপজেলার ভিক্ষনপুর মৌজার খতিয়ান নং-৩, জেএল নং-৮০ তে উভয়ের ১৯৪ নং দাগে ধানী শ্রেণীতে ১৮ শতক জমি রয়েছে। পরবর্তীতে দুই ভাই ৯ শতক করে ভাগে পায়। সেই সূত্রে অনিল চরন সরকার তার ভাগের ৯ শতক জমি একই গ্রামের অনিল কুমার প্রাং এবং তার স্ত্রী রাধা রানী কে ৪ জুন ১৯৯০ সালে এককালীন দানপত্র হিসাবে রেজিস্ট্রি করে দেন।

কিন্তু সেই জমিতে প্রায় দেড় শত বছর পূর্বে থেকে একটি কালি পুজার আসন এবং অনেক পুরাতন একটি গাছ রয়েছে। যা ঢেপর তলা কালি বাড়ি নামে পরিচিত। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতিবছর পূর্জা অর্চনা ও সাথে মেলা উদযাপন করে আসছে। সেই জমির খারিজ ও খাজনা প্রদান সহ ভোগ দখল করে আসছে অনিল কুমার প্রাং দিং। দন্দ্বের জের ধরে স্থানীয়দের মিমাংশায় হাফ শতক জমি ফজলুর রহমান থান্দার এর নিকট বিক্রি রেজিষ্ট্রি করে দেন। বর্তমানে সাড়ে ৮ শতক জমি ভোগ দখল করে আসছে।

অপরদিকে অমিও চরন সরকার ওরফে অশিত তার ভাগের ৯ শতক জমি রয়েছে। অথচ সেই জমি রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার আড়ইল গ্রামের তছির উদ্দিন থান্দারের নিকট ১২ শতক জমি বিক্রি ও রেজিস্ট্রে করে দেন। এরপর থেকে ৯ শতক দখল পূর্বক অতিরিক্ত ৩ শতক জমি দখলের জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে আসছে।

এ ঘটনায় শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পুলিশিং কমিটির নিকট অনিল কুমার প্রাং অভিযোগ দায়ের করেন। তার প্রেক্ষিতে গত ২৯ আগষ্ট ২০২১ তারিখে বড়বড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আপোষ মিমাংশায় বসলেও বিবাদী পক্ষ উপস্থিত হয়নি।  চলতি বছর ৫ অক্টোবর মোঃ বাবু থান্দার হুমকি প্রদান করলে অনিল কুমার প্রাং পুঠিয়া থানায় একটি জিডি দায়ের করেন।

এলাকার অরুন কুমার সরকার, বয়েন শেখ, প্রফুল্লা সরকার, নিরাঞ্জন কুমার সরকার সহ অনেকে জানান, আমরা জানি এই জায়গাটা অনিল কুমার প্রাং এর ৯ শতক রয়েছে। প্রায় দের শত বছর পূর্বে থেকে এখানে পুর্জা ও মেলা উদযাপিত হয়ে আসছে। এরমধ্যে গত বছর ৫ অক্টোবর মোঃ বাবু থান্দার ও তার লোকজন এসে প্রায় ৩ শতক জমি দখল করে বাঁশ দিয়ে ঘিরে পিয়াজ ও পেয়ারা গাছ রোপন করে। এই কাজটি সঠিক করেনি।

অনিল কুমার প্রাং জানান, এই জায়গা নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে বিবাদ চলে আসছে। আমি মিমাংশার জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু তার সমধান পাইনি। বর্তমানে সেই জায়গা তারা দখল করেছে। শুধু তাই নয় সব সময় আমাকে এবং আমার পরিবার কে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে আসছে। আমরা নিরাপত্তা হিনতায় ভূগছি। প্রশাসনকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শুকুর আলী সরদার বলেন, আমরা বার বার মিমাংশার জন্য বলেছি কিন্তু বিবাদি পক্ষ মিমাংশায় বসেনা। তাই সেইটা মিমাংশা করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পুলিশিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, অনিল কুমার প্রাং মাননীয় সংসদ সদস্য বরাবর আবেদন করেন।

তার প্রেক্ষিতে আবেদনটি পুলিশিং কমিটির নিকট প্রেরণ করেন। আমরা সেটি প্রাপ্ত হয়ে উভয় পক্ষকে কয়েকবার ডাকি। কিন্তু বিবাদী পক্ষ মোঃ বাবু থান্দার একবারও আসেননি। পরবর্তীতে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মতামত দেওয়া হয়েছে।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল জানান, দুই ভাই আট আনা করে ভাগে পাবে। সেই হিসাবে অনিল কুমার প্রাং সঠিক আছে। আর মোঃ বাবু থান্দার অন্যায় ভাবে তাদের জায়গা দখল ও বিবাদ করে আসছে।

থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সরোয়ার্দী হোসনে জানান, এ বিষয়ে অনিল কুমার প্রাং একটি জিডি করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।