বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় নানা আয়োনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী মতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী পালিত হয়েছে। বুধবার(০৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ১০টার দিকে বগুড়া জেলা প্রশাসন ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে জিলা স্কুল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
পরে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বগুড়া সদর ও পৌর এলাকার কয়েক হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশগ্রহণ করেন। এসময় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ নানা সাজে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন ভাবে আনন্দ প্রকাশ করে।
শোভাযাত্রা শেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু।
জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ডা. মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি সাগর কুমার রায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু কুমার রায় নির্মল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ডা. এন সি বাড়ই, সাধারণ সম্পাদক নিরাঞ্জন সিংহ, বগুড়া পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ, সাধারণ সম্পাদক ডা. সুজিত কুমার তালুকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক শেখর রায়।
একইদিন বেলা ১১টার দিকে জেলার শেরপুরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপিত হয়েছে। শেরপুর কেন্দ্রীয় জগন্নাথ মন্দির কমিটি ও বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি, হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ শেরপুর, বগুড়া শাখার যৌথ আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজারো ভক্তবৃন্দ অংশগ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানে শেরপুর পৌর মেয়র জানে আলম খোকা, অফিসার ইনচার্জ(ওসি) বাবু কুমার সাহা, সাবেক মেয়র স্বাধীন কুমার কুন্ডু, শেরপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিমাই ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম কুন্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক বাধন কর্মকার কৃষ্ণ, জগন্নাথ মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি প্রকাশ সরকার, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার কুন্ডু, শেরপুর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের, সাধারণ সম্পাদক পরিমল দত্ত, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দীপক কুমার সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরভ অধিকারী শুভ, পৌর কাউন্সিলর সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্যাম, চন্দন কুমার দাস রিংকু, করুনা রানী ঘোষ, শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শুভ কুন্ডু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শোভাযাত্রায় নিরাপত্তার জন্য থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল।
সনাতন ধর্মীয় মতে, দ্বাপর যুগের শেষ দিকে মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃৃষ্ণ। হিন্দু পুরান মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের আরও বিশ্বাস, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন, পাপ, তাপ, মোহ, হিংসা বিদ্বেষকে বিতারিত করে সত্য- সুন্দর ও শান্তির অমেয় ধারা প্রতিষ্ঠা করতে মানুষরূপে যুগে যুগে পৃথিবীতে আজও অবতীর্ণ আসছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এ বছর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৯তম জন্ম উৎসব পালন করছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
হিন্দু ধর্মীয় পঞ্জিকা মতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয় তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। এবছর ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর দু’দিনই পালন করা যাবে জন্মাষ্টমী। ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪.০৮ মিনিটে শুরু হয়ে, ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪.৪৫ মিনিটে সমাপ্ত হবে।