যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে উঠার আগেই দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে এলো বড় কোনও আন্তর্জাতিক সংকট। আর সেটি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান। সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেশটির সামরিক বাহিনী। আটক করা হয়েছে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’সহ মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও শাসক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে। দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরপরই সু চি সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে সেনাবাহিনী। সেসব পদে ইতোমধ্যে ১১ জন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা। বাকিরা সেনাসমর্থিত দল ইউএসডিপির সদস্য। আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিজ হাতে রেখেছেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লইং।
মিয়ানমারে হঠাৎ এই সামরিক জান্তার উত্থানে দেশে-বিদেশে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এ সেনা অভ্যুত্থানের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চলমান অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সাংবিধানিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখা হবে এবং দেশটিতে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। মিত্র দেশ চীনও মিয়ানমার পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে বলে জানিয়েছে বেইজিং।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গ্রেফতারের ঘটনায় সৃষ্টি পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কী ভূমিকা নেবে- দিকেই চোখ বিশ্বনেতাদের। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য এ সংকট মোকাবিলা ‘আন্তর্জাতিক পরীক্ষা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর এক বিশ্লেষণে এ তথ্য জানানো হয়।
গেল ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মার্কিন সরকারের ক্ষমতায় বসেন বাইডেন। এর ঠিক ১৩তম দিনে মিয়ানমারে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রক্ষমতা কব্জা করে সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায় বাইডেন প্রশাসন। এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, সু চি’সহ আটক নেতাদের মুক্তি না দিলে মিয়ানমারের দায়ী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সেইসঙ্গে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্থান বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টারও তীব্র বিরোধিতা করা হয়।
হোয়াইট হাউসের পর গতকাল সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাইডেন নিজেও এ নিয়ে এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সরাসরি হুমকি দিয়েছেন। তাঁর প্রশাসন মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছেন বাইডেন।
বাইডেন সরকার মিয়ানমারের ওপর সম্ভাব্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলো কী নিতে পারেন, রয়টার্সের প্রতিবেদনে তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, শাস্তির অংশ হিসেবে মিয়ানমারের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন বাইডেন। মিয়ানমারে অর্থ সহায়তা কমিয়ে দিতে পারেন। মিয়ানমারের আর্মি জেনারেলদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করতে পারেন তিনি। এছাড়া মিয়ানমারে সেনা পরিচালিত কোম্পানিগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বাইডেন প্রশাসন।
প্রায় এক দশক আগে মিয়ানমারে সেনা কৃর্তপক্ষ গণতান্ত্রিক উত্থানের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন মিয়ানমারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাগুলো ধীরে ধীরে তুলে নেয়। আবারও দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় নতুন করে সেইসব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের হুমকি এলো বাইডেনের দিক থেকে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে মানবাধিকারের বিষয়টি ফেরানোর অঙ্গীকারের পাশাপাশি মিত্রদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। তাঁর সেই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় কোন পথে হাঁটবে যুক্তরাষ্ট্র- বাইডেনের জন্য তা বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যদিও বাইডেন বিবৃতিতে সাফ বলে দিয়েছেন, তার প্রশাসন গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে। বিশ্বে যেখানেই গণতন্ত্র আক্রান্ত হবে এবং আক্রমণের শিকার হবে, সেখানেই গণতন্ত্রের পাশে দাঁড়াবে মার্কিন সরকার।