আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বিএনপি প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। তাদের দলের নেতারা প্রতিদিন টেলিভিশনে টকশোতে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তারপরও তাদের শান্তি হচ্ছে না। কথায় কথায় বলে আমরা তাদের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি না। দেশে কোনও গণতন্ত্র নেই। আর কোন গণতন্ত্র চায় তারা? আর কত কথা বলতে দিলে তাদের মনে হবে যে গণতন্ত্র রয়েছে। বিএনপি যদি মনে করে রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর করে, পেট্রোলবোমা মারলেই গণতন্ত্র আছে, তাহলে সেটি বিএনপি আর দেখবে না। এমন গণতন্ত্র তাদেরকে আর দেওয়া হবে না।’
আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে মাহবুব-উল আলম হানিফ এসব কথা বলেন।
হানিফ আরও বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত আছে এবং বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। আমরা এখন আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছি। মাত্র ৬০০ ডলার ছিল মাথাপিছু আয়। এখন আমাদের ২ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এদেশ এক সময় ছিল চরম দারিদ্র্যের দেশ। বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত ছিল। ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সেই বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় শুধু বৃদ্ধি পায়নি, রপ্তানির আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য সংকট আমরা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। খাদ্যে আজকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন আজকে দৃশ্যমান। কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে, মাতারবাড়ী-পায়রা দুটি সমুদ্রবন্দর হয়েছে। মেট্রো-রেল হচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। এতো উন্নয়ন দেশের মানুষের ভালো লাগলেও বিএনপির ভালো লাগে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৭৫ সালে জিয়া ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য বানিয়েছিল। সে সময় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা নিষিদ্ধ ছিল। শুধু জয় বাংলা নয়, সে সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ করা হয়। যে ভাষণের জন্য লাখ লাখ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সে ভাষণও নিষিদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধের কথা তখন কেউ মুখে আনতে পারত না। পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়ে যে জায়গায় ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেছিল, জিয়া সেখানের স্তম্ভ ভেঙে শিশুপার্ক নির্মাণ করেছে। কারণ সে পাকিস্তানের কোন লজ্জাজনক স্মৃতি এ দেশে রাখতে চায়নি।’
নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে বিএনপি সকালে এক কথা বলে বিকেলে আরেক কথা বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘যখন নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় এলো, শেষ সময় বিএনপি দাবি করলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন আইন চাই। তখন আমাদের আইনমন্ত্রী বলেছিলেন এতো স্বল্প সময়ে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করা কঠিন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল একাধিকবার বলেছিলেন, সরকার চাইলে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন একদিনে পাশ করতে পারে। বিএনপির দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইনমন্ত্রী বিলটির খসড়া সংসদে উত্থাপন করলেন। সেখানে বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ সব দলের সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্তভাবে সংসদে উত্থাপন করলেন। সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ হলো। বিলটি পাশ হওয়ার পরে তাদের কথা চেঞ্জ। এখন বলে সরকার তড়িঘড়ি করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও আইন তৈরি করলেন। বিএনপি সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা। মিথ্যাচারের রাজনীতি করা ছাড়া বিএনপির আর কিছু করার নেই।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম পাটোয়ারী দুলাল, চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল আমিন রুহুল প্রমুখ।