ভারতকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের


রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনলে ভারতকে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে একই কারণে তুরস্ককেও নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ সতর্কাতার ক’দিন আগেই মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিবেদনেও হুঁশিয়ারি করে বলা হয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্র প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে ভারত।

২০০৭ সালে রুশ বাহিনীতে যুক্ত হওয়া এস-৪০০ এর ব্যাপারে ২০১৪ সালে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার কাছ থেকে এস -৪০০ প্রযুক্তি কেনার জন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এই প্রযুক্তির সাহায্যে শত্রুর বিমান এবং ড্রোনও ধ্বংস করা যাবে।

ওই সময় ট্রাম্প প্রশাসন দিল্লিকে সাফ জানিয়ে দেয়, রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে ভারত। এ বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)-এর প্রতিবেদনেও নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

রয়টার্স মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানিয়েছে, মার্কিন প্রশাসন ভারতকে যে সতর্ক করেছে তার অর্থ হচ্ছে, যদি ভারত রাশিয়া থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমদানি করে তাহলে তাদেরকে তুরস্কের মতো একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় সম্প্রতি ন্যাটো মিত্র তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়া থেকে বিশ্বের উন্নততর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কেনার ব্যাপারে ২০১৮ সালে চুক্তিতে সম্মত হয় দিল্লি-মস্কো। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যেই এর প্রথম চালান ভারতের হাতে পাওয়ার কথা।

বিকল্প হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে এস-৪০০ কেনার চুক্তি বাতিল করলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টার্মিনাল হাই অলটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) এবং প্যাট্রিয়ট-৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাবে।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকার ট্রাম্পের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ী প্রশাসন যখন ক্ষমতার শেষ মুহূর্তের সময় পার করছে তখন আবার ভারতের সাড়ে ৫০০ কোটি ডলারের এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চুক্তি বাতিলের জন্য চাপ সৃষ্টির প্রসঙ্গ সামনে এলো।

ওয়াশিংটন বলছে, ২০১৭ সালে আমেরিকায় যে সামরিক বিষয়ক আইন পাস করা হয়েছে তা থেকে নয়াদিল্লি রেহাই পাবে না। মার্কিন ওই আইনে বলা হয়েছে, যেসব দেশ রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি কিনবে তাদেরকে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতে মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া থেকে ভারত এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে চায় সে ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন সচেতন রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভারত এই ব্যবস্থা রাশিয়া থেকে গ্রহণ করেনি।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ভারত যদি এই চুক্তি বাতিল করে তবে দুই দেশের মধ্যকার চলমান কূটনৈতিক টানাপড়েনের অবসান ঘটতে পারে।

মার্কিন দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, আমরা আমাদের সমস্ত বন্ধু এবং মিত্র দেশকে রাশিয়ার সাথে লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। কারণ এতে সেসব দেশের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে যে আইন পাস হয়েছে তাতে কোন দেশকে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এর ফলে মিত্র দেশগুলোও বিপদের মুখে পড়ছে।