প্রতিনিধি, ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ): চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে সরকারি উপজেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার সঙ্কটে নানা হয়রানির শিকার রোগীরা! জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার প্রয়োজন বলে ভুক্তভোগীদের দাবী। শক্তহাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরজমিনে জানা গেছে, ভোলাহাট উপজেলায় বসবাসরত সোয়া লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে নেই পর্যাপ্ত পরিমানে ডাক্তার। ডাক্তার সঙ্কটের কারণে নানা হয়রানির শিকার চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন রোগীদের।
রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সেবার যন্ত্রপাতি। নেই নির্ধারিত পরিমাণ ডাক্তার। একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানপ্রাণ আপ্রাণ নিজ প্রচেষ্টায় দীর্ঘ লাইনে থাকা দূরদূরান্ত থেকে আসা শত শত রোগীদের সেবা দিতে প্রত্যক্ষ করা গেছে। যদিও তিনি প্রতিষ্ঠান প্রধান। তার থাকার কথা ছিল বড় চেয়ারে বসে তার অধীনে কর্মরত ডাক্তারদের কমান্ড ও তদারকী করার। সেদিকে তিনি তোয়াক্কা না করে কলুর বলদের মত চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন নিত্যদিন।
৫০ শয্যার বিশালাকার হাসপাতালটির ভিতর-বাহিরে চাকচিক্য থাকলেও নেই স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার ডাক্তার। এ যেনো আলীশান টাইলস যুক্ত সুন্দর মসজিদ রয়েছে। কিন্তু নামাজ পড়ার মতো যথেষ্ট মুসল্লী নেই। এ ধরণের দৃশ্য প্রতীয়মান হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতালে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা উপজেলার মুসলিমপুর গ্রামের মুঞ্জুর আলী চিৎকার করে বলেন “হাসপাতালে কি ১টাই ডাক্তার বে। না বর্তমান সরকারের কাছে ডাক্তারের অভাব পড়ে গেছে যে এতোবড় হাসপাতালে ১টা ডাক্তার দিয়ে শত শত রোগীর চিকিৎসা চলছে”।
উপজেলার খাড়বাটরা গ্রামের ষাটোর্ধ করিমন বেওয়া নামের রোগীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হ্যাঁরে বেটা..পোঁহাতে অ্যায়াছি, বাড়িতে কখন যে যাবো, গ্যাদার বাপকে ভাত রান্হ্যাঁ জমিতে পাঠ্যাতে হ্যাবে”।
ভোলাহাট উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের বিশেষ করে গরীব-অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান সরকারি হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যথেষ্ট পরিমাণ ডাক্তার না থাকায় সোয়া লাখের জনবহুল এলাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। বেকায়দায় পড়েছে জরুরী ভাবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলে মন্তব্য করছেন সচেতনমহল।
তারা আরো বলেন, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে ২৭ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সেখানে টিএইচও’সহ মাত্র ৫জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরীভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা শক্তহাতে নেয়া প্রয়োজন। তা-না হলে ভোলাহাট উপজেলা হতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়ার আগেই রাস্তায় রোগী মারা যাবার দৃশ্য পরিলক্ষিত হবে।
এ ব্যাপারে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুব হাসান বলেন, সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার মৌখিক, লিখিত এমনকি অনলাইনে নিয়মনীতি মেনে কাজ করেও কোন সারা পাচ্চিনা। এ হাসপাতালে আমিসহ ৫ জন ডাক্তার কর্মরত আছি। তিনি আরো বলেন, ভোলাহাট উপজেলাটি দুর্গম ও প্রত্যন্ত হওয়ায় ডাক্তারগণ আরো অনীহা প্রকাশ করেন বলে তিনি জানান।
ছবিক্যাপশনঃ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ভোলাহাট স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গেট ও ভবনের দৃশ্য। পাশে দীর্ঘ লাইনে থাকা রোগীরা।