মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রক্ত দিতে নিয়ে এসে রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিজারিয়ান অপারেশন করার পর রোকসানা বেগম (৩৫) নামে এক প্রসুতিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইনসাইট ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। সদ্য প্রসুত শিশু সন্তানসহ ৪ কন্যা সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পরেছেন তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন।
ক্লিনিক মালিকের কারসাজিতে তার স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে তিনি এখন দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন। উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে লুৎফর রহমান বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে উপজেলা সদরে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন যে, তার স্ত্রীর শরীরে রক্ত কম থাকায় ডাক্তারের পরামর্শে গত ৩০ এপ্রিল সকালে তিনি তার নয় মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে রক্ত দেয়ার জন্য উপজেলা সদরের ইনসাইড ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান।
সেখানে রক্ত দেয়ার সময় তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে প্রসব ব্যাথার ওষুধ খাওয়ানো হয়। এতে তার প্রসব ব্যাথা শুরু হয়। পরিবারের লোকজন তার নরমাল ডেলিভারি করাতে চাইলেও ওই ক্লিনিকের পরিচালক হাবীব তাকে নানাভাবে ভূল বুঝিয়ে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভালো ডাক্তার দেওয়ান আব্দুস সবুর অপারেশন করবেন জানিয়ে বিভিন্ন প্রলোভনে সিজারিয়ান অপারেশন করার জন্য চাপ দেন।
এক পর্যায়ে দুপুরে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই অপারেশন করে বাচ্চা বের করা হয়। এর ঘন্টাখানেক পর অপারেশন থিয়েতার থেকে রোগীকে বের করা হলে রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর আবারও প্রসুতি রোকসানাকে আবার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। এতে তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
সন্ধ্যায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে জরুরী ভিত্তিতে আইসিইউতে নিতে বলেন। সেখানে আইসিইউ খালি না থাকায় পাশর্^বর্তী একটি ক্লিনিকের আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার সময় পরদিন ভোরে তার মৃত্যু হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো অভিযোগ করেন যে, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং ভালোভাবে অজ্ঞান না করেই তড়িঘড়ি করে ভূল অপারেশন করে তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে।
এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঘটনার পরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু দেড় মাসেও এব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ২৩ জুন এ ব্যাপারে তিনি আবারো একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি তার চার কন্যা শিশু নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলেও জানার।
সদ্য প্রসুত শিশুসহ তাদেরকে মানুষ করা তার জন্য দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। জানতে চাইলে ইনসাইড ডায়গনস্টিক সেন্টার এন্ড জেনালে হাসপাতালের মালিক হাবীব ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. দেওয়ান আব্দুস সবুর এব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজী হননি। জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খুরশিদুল ইসলাম অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে জানান, এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।