রাবিতে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরিতে ১৮ জন চিকিৎসক 


রাবি প্রতিনিধি :একটি দেশ ও জাতির আগামী দিনের কর্ণধার হলো তরুন  শিক্ষার্থীরা। এ জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই সুস্থ,সবল ও কর্মক্ষম থাকতে হবে । সুস্থ দেহের সঙ্গে সুস্থ মন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৮ জন।
মেডিকেল সেন্টারে ৩৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও মোট চিকিৎসকের অর্ধেক নিয়েই ৮ বছর ধরে চলছে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। ফলে শিক্ষার্থীদের একদিকে যেমন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হচ্ছে না অন্যদিকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এ সংকট সমাধানের জন্য দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে  বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১৮ জন। অথচ মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মরত চিকিৎসকরাও। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
তারা বলছেন, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় দেয়া হয় প্যারাসিটামল। এছাড়া বিশেষ রোগে চিকিৎসা দিতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। অনেক সময় প্যারাসিটামলই পাওয়া যায় না । বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ ফলে আমাদের স্বাস্থ্য-চিকিৎসা খাতের সীমাবদ্ধতা সামনে আসে। কয়েক বছর আগে মানুষ যে রকম স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারত, নানা কারণে সেটি এখন আর পারছে না। অনেক বেশি মানসিক ও শারীরিক চাপ নিয়েই জীবনযাপন করছেন নাগরিকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। ক্যাম্পাসে বাইরে ট্রিটমেন্ট নেওয়া সম্ভব না। চিকিৎসক সংকট আজ থেকে নয়। আগে একজন শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা তারপর পড়াশোনা। এমন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকার জন্য দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অচিরেই শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, কোনো চিকিৎসার জন্য রাবির মেডিকেলে গেলে চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে আমাদের। যেখান পড়াশোনার আগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রশাসনের উচিত বলে আমি মনে করছি। তাই দ্রুত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে বা নিয়োগের বিকল্প ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে বলে আমি আশাবাদী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নুরুন নাহার বলেন, আমরা যারা নারী শিক্ষার্থী আছি তাদের সবথেকে বেশি ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে। নারীদের বিভিন্ন গোপনীয় বিষয় থাকে যা বলার জন্য একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন কিন্তু সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নেই। যার ফলে আমরা পুরুষ চিকিৎসকের কাছেই এসব বলছি না হয় দুরে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে হচ্ছে। তাই রাবির চিকিৎসা কেন্দ্রে ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে বলে আমি আশাবাদী।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। এটা তদন্তের বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। তাই যতক্ষণ সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেবে আমরা কোনো নিয়োগই দিতে পারছি না। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয় চিন্তা করে বিকল্প চিন্তা ভাবনা করবো বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রশাসনিক কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হয়।