নিজস্ব প্রতি বেদক: ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সোমবার দুপুরে নগরভবনের সিটি হল সভাকক্ষে খেতাবপ্রাপ্তসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান ও আলোচনা সভা অনুুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. শামসুল আলম বীর প্রতীককে সম্মাননা স্মারক ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দ, শহীদ জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আমাদের মাঝে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাদের সংবর্ধিত করতে আমাদের এই আয়োজন।
মেয়র আরো বলেন, মহান বিজয়ের মাসে আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে যাচ্ছি। তা হচ্ছে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহাগরীর কেন্দ্রস্থল সোনাদিঘী সংলগ্ন সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে ১৬ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছেন। শহীদ মিনারটি নির্মিত হলে ভাষা সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সারা বছর নানা আয়োজনের সুবিধা পাবে মহানগরবাসী।
রাসিক মেয়র বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে নগরীর সিএন্ডবির মোড়ে প্রায় ৫২ ফুট উচু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতিকৃতি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক নাম করণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামানিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বড় একটি ঘটনা। এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে তাদের বিজয় ছিনিয়ে আনবে। ইতিহাসের রাখার রাজা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তর্জনী উচিয়ে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে বীর বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে। প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামানিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সময়কালে মাত্র নয় মাসে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
গণহত্যা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম তেমন জানে না। গণহত্যা নিয়ে আমরা বেশি কথাও বলি না। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিজয়ের মাসে আমরা শপথ নিই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষ আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী। স্বাগত বক্তব্য দেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাসিকের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা- কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে টি বাঁধা সংলগ্ন বাবলাবন বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌভে পুষ্পস্তক অর্পণ করেন রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বাদ জোহর সোনাদিঘী জামে মসজিদ ও নগর ভবন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অন্যদিকে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নগর ভবনসহ ওয়ার্ড কার্যালয় ও কর্পোরেশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত আকারে নগর ভবন চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
বাদ জোহর সোনাদিঘী জামে মসজিদ ও নগর ভবনের মসজিদে জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, আত্নদানকারী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নগর ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও রাস্তাঘাট আলোকায়ন, জাতীয় পতাকা, ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে।