বিরোধের জেরে বন্ধ করে দেওয়া কাতারের দূতাবাস পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান এক বিবৃতিতে বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই দোহাতে সৌদি দূতাবাস আবারও চালু হবে। গত সপ্তাহেই কাতার-সৌদির মধ্যকার দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটেছে এবং সীমান্ত চালু হয়েছে।
শনিবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শেষের পরে দোহায় আমাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করা হবে। এর মাধ্যমে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্বাভাবিক হবে।
সৌদি আরবসহ আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে সন্ত্রাসে মদদের অভিযোগে কাতারের ওপর অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয়। আচমকা এমন অবরোধে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ছোট্ট উপসাগরীয় দেশটিতে।
খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় দোকানপাটে হামলে পড়ে মানুষজন। রাতারাতি ধস নামে দোহার শেয়ারবাজারে। মিসর, সৌদি, আমিরাতে আটকা পড়েন অসংখ্য কাতারি নাগরিক। কিন্তু গত সপ্তাহেই কাতারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন সৌদি আবারও কাতারে দূতাবাস চালু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদির পাশাপাশি অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গেও কাতারের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছে।
অবরোধের পর সৌদি ভেবেছিল, জল-স্থল-আকাশে অবরোধের চাপে কাতারের অর্থনীতির এমন অবস্থা হবে যে, তারা হাঁটু গেড়ে আরব চতুষ্টয়ের দাবি মানতে বাধ্য হবে। শুরুর কয়েকদিন সেরকমই পরিস্থিতি ছিল ২৫ লাখ জনসংখ্যার ছোট দেশটিতে। একদিকে খাদ্য সংকটের ভয়, অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ধস। তারপরও আপস করতে রাজি হননি কাতারের ৩৭ বছর বয়সী আমির শেখ তামিম।
এর বদলে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান তুরস্ক এবং ইরানের কাছে। সৌদি আরবের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক থাকা এ দুই দেশই জরুরি ভিত্তিতে খাবার পাঠায় কাতারে। সৌদি সামরিক অভিযান চালাতে পারে এমন শঙ্কায় তুরস্কের কাছে সামরিক সাহায্য চায় কাতার। তাদের হাত ধরে মাত্র এক বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় উপসাগরীয় দেশটি।
গত সাড়ে তিন বছরের অবরোধে কাতারের অর্থনীতির ক্ষতি তো হয়নি, বরং তারা এখন খাদ্য উৎপাদনসহ অনেকে ক্ষেত্রেই স্বাবলম্বী। আন্তর্জাতিক মহলেও ছোট এই দেশটি তাদের সম্মান এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
এমনকি, সৌদি ও আমিরাতের বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই সাড়ে তিন বছরে তাদের অবরোধে কিছুই অর্জিত হয়নি। অবরোধ তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে পরাজয় যতটা না হয়েছে সৌদি আরবের, তার চেয়ে বেশি হয়েছে কাতারের ঘোরতর শত্রু সংযুক্ত আরব আমিরাতের।
কাতারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আসলে আমিরাতের। সৌদি পথ বদলানোয় আমিরাতও বাধ্য হচ্ছে সেই পথে হাঁটতে। এক্ষেত্রে কাতার অনেকটাই সফল বলা যায়। কারণ তারা নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় থেকে পরিস্থিতি বদলাতে অন্যদের বাধ্য করেছে।