সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ 


নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুড়িহারী-টিকরামপুর গ্রামের গুড়িহারী মৌজায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের পরিচালনাকারী (অপারেটর) পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে। সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করা সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে কৃষকেরা ওই অপারেটরকে পরিবর্তনের দাবি জানান।
স্থানীয় কৃষকদের পক্ষে টিকরামপুর গ্রামের বাসিন্দা সামিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিএমডিএ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বিএনডিএ নিয়ামতপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নের গুড়িহারী মৌজায় স্থাপিত গভীর নলকূপের অধীনে গুড়িহারী ও টিকরামপুর গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষকের ১৬০ থেকে ১৭০ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়। গভীর নলকূপটির অপারেটর গুড়িহারী গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম মিলন। গভীর নলকূপটিতে অপারেটর হিসেবে দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইব্রাহিম মিলন বিএমডিএ নির্ধারিত সেচ চার্জের চেয়ে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করছেন।
এছাড়া গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি ও নষ্ট হওয়ার কথা বলে মেরামতের নামে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করে আসছেন। এসব বিষয়ে সাধারণ কৃষকেরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে থাকেন অপারেটন ইব্রাহিম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মাস আগে গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে মর্টারও। এবার আমনের মৌসুমে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ লাগবে না বলে সবাই ধারণা করেছিল কিন্তু গত ২০-২৫ দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের মাঠ শুকনো হয়ে গেছে। খেতের মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় ধানের গাছ শুকিয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। ধানের শীষে ধরা দানাগুলো শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে ওই সব খেতে ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।
অভিযোগকারী টিকরামপুর গ্রামের কৃষক সামিনুল বলেন, আমরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গত তিন মাস ধরে নলকূপটি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু অপারেটর সেটি ঠিক করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমন উৎপাদনের শেষ মূহূর্তে এখন পানি না পেলে আমনের আবাদ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বারবার কৃষকের পক্ষ থেকে অপারেটরকে জানানো হলেও তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি।
আরেক কৃষক মুকুন্দ বলেন, ‘সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ধান লাগাইছি। আর কয়েকটা দিন পর ধান কাটা শুরু হবে। ধান কাটার আগমূহূর্তে আর একটি সেচ খুব দরকার আছিল। কিন্তু অপারেটর ডিপ চালু না করায় কোনোভাবেই সেচ  দেওয়া সম্ভব হছে না। ফসল ভালো না হলে পরিবার লিয়ে চলা ও ঋণ পরিশোধ করতে খুব সমস্যাত পড়তে হবে।’
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপটির অপারেটর ইব্রাহিম মিলন বলেন, ‘ট্রান্সফরমার লাগানোর জন্য এবং মর্টার ঠিক করতে বেশ কিছু টাকা প্রয়োজন। আগে এ রকম সমস্যায় কৃষকেরা সবাই মিলে একটা নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদা তুলে নলকূপ ঠিক করা হয়েছে। এবারের সমস্যা নিয়ে কৃষকদের সাথে বারবার আলোচনা করা হয়েছে। তাঁদের গাফিলতির কারনেই এ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এখানে আমার কোনো গাফিলতি নেই।’
এ বিষয়ে উপজেলা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওই গভীর নলকূপের অপারেটর ও কৃষকদের ডাকা হয়েছে। সবার সাথে কথা বলে স্বল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাটির সমাধান করা হবে।