‘স্বামীকে হারিয়ে কষ্টের থেকে আমি গর্ব বোধ করি’ 


রাবি প্রতিনিধি:  ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের দুইশ বছরের শাসন-শোষণের বেড়াজাল ভেঙে দুটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান শাসনামলে সেই একই শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে থাকলো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। দীর্ঘ ২৪ বছর এই শোষণের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছে বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালে এই অত্যাচার-নির্যাতন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো স্তব্ধ করতেই তারা এই ক্যাম্পাসে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এই বর্বরতায় আমি স্বামীকে হারিয়েছি, কিন্তু এটা কষ্টের চেয়ে বেশি গর্বের।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক শহীদ অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ূমের স্ত্রী অধ্যাপক মাসতুরা খানম।
তিনি আরো বলেন, হানাদার বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ক্যাম্পাসের জোহা হলের বন্দিশালায় ধরে নিয়ে আসা মানুষের উপর নির্যাতন চলতো। এছাড়াও মন্নুজান হল, পশ্চিমপাড়ার ১৭ নম্বর কোয়াটার, জুবেরী ভবনে তারা নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলে। যেখান থেকে প্রতিরাতে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন ও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসত। ফলে সাধারণ মানুষ ভয়ে সেদিকে যেত না। এসব নির্মমতা শুধু হানাদারের হাতে হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাতেও হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের চেতনা ও আদর্শ সবাইকে লালন করার আহ্বান জানান তিনি।
 উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে স্তিমিত করা। তাই ইয়াহিয়া খান এই যজ্ঞ পরিচালনার জন্য বেলুচিস্তানের কসাই টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলীকে এখানে পাঠিয়েছিলেন। তারা পরিকল্পিতভাবে বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তখন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা দেশ। বিশ্বের কোথাও এমন হত্যার নজির নাই।
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় তিনি আরো বলেন, এই হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিল পাক হানাদারদের এদেশি দোসররা। এই রাজাকার ও আলবদরেরা খুঁজে খুঁঁজে এই বুদ্ধিজীবীদেরকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। নির্মম হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও বাঙালি দমে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে, রক্ত ও জীবন দিয়ে এই দেশ মুক্ত করেছিল। প্রসঙ্গক্রমে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাক হানাদারদের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার নির্মম চিত্র তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, সিন্ডিকেট সদস্য, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ বিশিষ্ট শিক্ষক ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, এদিন ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮টায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে এবং সাড়ে ৮টায় শহীদ মিনার ও বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।