হতাশা কাটিয়ে ওঠার ৭ উপায়



আমাদের অনেকেরই জীবনে অনেক ট্রমাটিক এক্সপেরিয়েন্স থাকে বা নানান কারণে আমরা হতাশায় ভুগি। হতাশার কারণে আমাদের জীবন একটি গণ্ডির মধ্যে আটকে যায় এবং এর থেকে বের হয়ে আসতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। নিচের এই কাজগুলো করার মাধ্যমে এবং চিন্তাতে পরিবর্তনের মাধ্যমে হতাশা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা সম্ভব।

ভয় এবং শঙ্কা কম করুন: আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ আছেন যারা বিষণ্ণতার মাঝে জীবন পার করে দেন। আর অনেকে আছেন যারা জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। যারা বিষণ্ণ থাকে তারা একটা ভয় বা শঙ্কার মাঝে থাকে। সেটা হতে পারে ক্যারিয়ার, সম্পর্ক, জীবনের সিদ্ধান্ত ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে। ভয়ের এই দেয়াল তৈরি করে এর মাঝেই আটকে থাকে। নিজের যোগ্যতা, সম্ভাবনা, গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে শঙ্কার কারণে একটি জায়গাতেই আটকে থাকে। আমাদের জীবনকাল অনেক কম, আর সেটা ভয়ের মাঝে কাটিয়ে দেয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না। সুতরাং বিষণ্ণতার ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে হবে, ভয় এবং শঙ্কা কমিয়ে ফেলতে হবে।

রাগ ক্রোধ ধরে রাখবেন না:  অনেকেই আমাদের মনে কষ্ট দেয়, প্রতারণা করে, বিভিন্ন কারণে সম্পর্ক নষ্ট করে। হতে পারে ব্যবসায়, পরিবারে বা রিলেশনশিপে। অথবা আমরা হয়ত বুঝে না বুঝে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। আমরা যাই করি না কেন, এর নেগেটিভ বিষয়গুলো যদি আমরা মনে নিয়ে বসে থাকি তাহলে আমরা ধীরে ধীরে আরও হতাশ হয়ে পরি। সুতরাং জীবনে সুখি হতে হলে এই নেগেটিভ আবেগ ছেড়ে দিতে হবে, কেউ যদি আপনার ক্ষতি করে থাকে বা আপনার সাথে যেকোনো কারণে সম্পর্ক নষ্ট করে থাকে, তাহলেও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিতে হবে এবং সম্ভব হলে ভুলে যেতে হবে। যতই মনে ক্ষোভ ধরে রাখবেন ততই নিজের ক্ষতি করবেন। আপনি যে বিষয় বা যাকে নিয়ে ভেবে নিজের ক্ষতি করছেন, তার হয়ত কিছুই আসে যায় না তাতে, সুতরাং নিজের ভালর জন্যেই সেই ক্ষোভ ধরে থাকা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

জীবনের বাধাকে সমস্যা নয়, সুযোগ মনে করুন: বাস্তবে সমস্যা যত না বড় থাকে, আমরা কল্পনায় সমস্যাকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে ফেলি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এর ওপর নির্ভর করে আমরা কিভাবে সমস্যাকে দেখি এবং কিভাবে রিঅ্যাক্ট করি। আপনার বিষণ্ণতার কারণে আপনার যেকোনো সমস্যাকে শুধু বাধাই মনে হবে, আর সমস্যা আপনার কাছে সুযোগ মনে হবে যদি আপনি নিজে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন এবং জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। আপনি হয়ত চাকরি না পেয়ে হতাশ, কিন্তু কখনো ভেবেছেন এই অবসর সময়টা হয়ত নিজেকে উন্নত করার একটি উপযুক্ত সুযোগ হতে পারে? আপনি হয়ত হতাশ আপনার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে, কিন্তু এটা কি আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত এবং করণীয় বিষয় নিয়ে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার এবং তা পরিবর্তনের সুযোগ নয় কি? সুতরাং সমস্যায় থাকলে সমাধানের চেষ্টা নিজে করুন, আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই সামলাতে হবে, অন্য কেউ আমাদের উদ্ধার করবে না। এবং একই সাথে লাইফ নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার চেষ্টা করুন, তাতেই সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করতে পারবেন।

সব কিছুর ভাল দিকটা দেখার চেষ্টা করুন: হতাশা আমাদেরকে অনেক নেগেটিভ করে দেয়। এই নেগেটিভ বিষয়ের কারণে আমরাও শুধু মানুষের নেগেটিভ দিক গুলোই দেখি। নিজের ভেতরের নেগেটিভ চিন্তার কারণে আমরা ছোট বড় সকল বিষয়ের মাঝেই শুধু খারাপ দিকটাই দেখি, ভাল দিকটা আর চোখে পরে না। হোক সেটা আমাদের পরিবারের কেউ, সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব অথবা সমাজের যেকোনো মানুষ। সুতরাং একটি সুখি জীবনের জন্যে মানুষের ভাল দিকটি দেখার চেষ্টা করুন, অন্যদের সম্পর্কে ভাল মতামত রাখুন। সব কিছুর ভাল দিকটা দেখার চেষ্টা করুন। একটা বিষয় মনে রাখবেন, আমরা অন্যদের নিয়ে যা ভাবি তা আসলে আমাদের ব্যক্তিত্যের প্রতিফলন।

কারো সাথে শেয়ার করুন: জানি সব কথা সবাইকে বলা সম্ভব হয়ে ওঠে না, অনেকসময় বলে লাভও হয় না। কিন্তু নিজের ভেতরে কথা আটকে না রেখে কাউকে খুলে বললে অনেকটা হালকা হওয়া যায়। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যপারটাকে দেখা যায় এবং অনেক সময় সমাধানের উপায়ও পাওয়া যায়। চাইলে ব্যক্তিগত ওয়ান টু ওয়ান কোচের পরামর্শের মাধ্যমেও প্রেফসনাল উপায়ে হতাশা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা যায়। অথবা দুই একজন বন্ধু বান্ধব মিলে কোথাও থেকে ঘুরে আসা যায়। নিজের মধ্যে সবকিছু রাখবেন না, একটু হলেও শেয়ার করুন।

রুটিনে পরিবর্তন আনুন: হতাশ থাকা অবস্থায় প্রতিদিনকার গতানুগতিক জীবনের প্রতি একটি খারাপ লাগা চলে আসে। অফিস, ইউনিভার্সিটি, বা কাজে যেতে ইচ্ছা করে না, কিছুই ভাল লাগে না। এরকম অবস্থায় প্রতিদিনকার রুটিনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে কিছুটা হলেও ভাল লাগা তৈরি করা যায়। দিনের শুরুটা ভাল লাগার কাজ দিয়ে শুরু করুন, হতে পারে হাঁটতে যাওয়া, দৌড়ানো, সুইমিং, গান শোনা ইত্যাদি। যখন আপনি দিনের শুরু আপনার ভাল লাগার কাজ দিয়ে করবেন তখন আপনি নতুন একটি দিনের জন্যে আগ্রহী হয়ে থাকবেন। রুটিনের গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসার মাধ্যমে বিষণ্ণতার গণ্ডি থেকে কিছুটা হলেও বের হওয়া সম্ভব হবে।

চিন্তা পজিটিভ, তো জীবন পজিটিভ : হতাশা হচ্ছে ক্যান্সারের মতো। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে। হতাশা বাড়তে বাড়তে এক সময় আমাদের সম্পূর্ণ মাইন্ডসেট খুব বেশি নেগেটিভ হয়ে যায়। এবং তখন সব কিছুতেই শুধু নেগেটিভ বিষয়ই দেখতে পাই। আর বিপরীতে পজিটিভ মাইন্ডসেট আমাদের মাঝে সুখিভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে। দিনের শেষে আমাদের চিন্তা ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গিই এবং কাজই আমাদের জীবনকে গড়ে তুলে। সুতরাং বিষণ্ণতায় না ভুগে পজিটিভ চিন্তা, ছোট ছোট ভাল লাগার বিষয়গুলো এবং পছন্দের কাজের মাধ্যমে বিষণ্ণতা এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখবেন, চিন্তা পজিটিভ তো জীবন পজিটিভ।