২০২০ সাল যতটা না দিয়েছে তারচেয়েও বহুগুণ কেড়ে নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারিতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। দেশ-বিদেশের তারকা অঙ্গনের জন্যও এ বছরটি ছিল যেন সব হারানোর। ঢালিউডের মতো বলিউডেও এ বছর বছর বেশ কয়েকজন গুণী শিল্পীর জীবনাবসান হয়েছে। আবার বলিউডের কিছু মৃত্যু গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। বাংলা ভাষাভাষি টালিউডও এ বছর হারিয়েছে তাপস পাল ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে নক্ষত্রকে। একনজরে ২০২০ সালে যাদের হারালো ভারতের বিনোদন দুনিয়া:
তাপস পাল: মাত্র ৬১ বছর বয়সে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মারা যান বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ও তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য তাপস পাল। স্নায়ু ও রক্তচাপের সমস্যার কারণে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনেও ছিলেন তিনি।
ইরফান খান: বলিউড অভিনেতা ইরফান খান গত ২৯ এপ্রিল মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছিলেন।
ঋষি কাপুর: বলিউডের প্রভাবশালী কাপুর পরিবারের সন্তান কিংবদন্তি অভিনেতা ঋষি কাপুর দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে গত ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
ওয়াজিদ খান: বলিউডের নামি সঙ্গীত পরিচালক ওয়াজিদ খান গত ১ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২ বছর।
বাসু চ্যাটার্জি: পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার বাসু চ্যাটার্জি গত ৪ জুন ৯০ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
সুশান্ত সিং রাজপুত: এ বছর বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু। গত ১৪ জুন বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে সুশান্তের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনও সেই মৃত্যুর রহস্য কাটেনি। তার মৃত্যুতে বলিউডে এখনও তোলপাড় চলছে।
সরোজ খান: গত ৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলিউডের নন্দিত কোরিওগ্রাফার সরোজ খান। তিনি মাধুরী দীক্ষিত, শ্রীদেবী, ঐশ্বরিয়া রাই ও কারিনা কাপুরদের মতো কিংবদন্তি নায়িকাদের ‘ড্যান্স গুরু’ ছিলেন।
জগদীপ: বলিউডের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা জনদীপের মৃত্যু হয় গত ৮ জুলাই। তিনি বলিউড অভিনেতা ও নৃত্যশিল্পী জাভেদ জাফরি ও নাভেদ জাফরির বাবা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।
নিশিকান্ত কামাত: গত ১৬ আগস্ট ‘দৃশ্যম’ খ্যাত পরিচালক নিশিকান্ত কামাত মারা যান। তিনি অনেকদিন ধরেই লিভার সিরোসিসের সমস্যায় ভুগছিলেন।
এসপি বালাসুব্রমনিয়ম: বলিউডের কিংবদন্তি গায়ক এসপি বালাসুব্রমনিয়ম গত ২৫ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: ফেলুদা’খ্যাত বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় গত ১৫ নভেম্বর দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম। কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করা সৌমিত্র ১৯৫৯ সালে প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অভিনয় করেন।
সত্যজিত রায়ের ৩৪টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১৪টিতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। সিনেমা ছাড়াও নাটক ও যাত্রায় অভিনয় এবং লেখালেখি ও আবৃত্তিতেও খ্যাতি রয়েছে গুণী এই শিল্পীর। অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও একাধারে অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন ছিল তার বৈচিত্র্যের নানা দিক। সৌমিত্রের মৃত্যু ছিল বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।