দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির অলিম্পিক খ্যাত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজি (ডব্লিউসিআইটি)-এর ২৫তম আসর। ৭৫টিরও বেশি দেশের শতাধিক প্রযুক্তিবিদের অংশগ্রহণে ‘আইসিটি দ্য গ্রেট ইকুলাইজার’ প্রতিপাদ্যে ১১-১৪ নভেম্বর এ সম্মেলনে বিশ্বের ৬৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিটুবি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে ওইসব দেশে ব্যবসায়ের সুযোগ তৈরি হলো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সম্মেলনে উইটসা ও অ্যাসোসিওর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত কর হয়। এতে ‘এমিনেন্ট পারসনস অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে প্রথমবারের মতো ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা এ পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া এ পুরস্কার পেয়েছেন ইন্টারনেটের অন্যতম জনক ভিন্ট সার্ফ।
এদিকে ‘অ্যাসোসিও লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তথ্যপ্রযুক্তিতে সাফল্য অর্জন করায় বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থাও উদ্যোগকে পুরস্কৃত করে সংস্থাটি। এ বছর বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফো নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট (ইনফো-সরকার), বইঘর ও জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়ন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অ্যাসোসিও পুরস্কার অর্জন করেছে।
করোনার সংক্রমণ মাথায় রেখে হাইব্রিড (সশরীর ও অনলাইনে) মডেলে অনুষ্ঠিত হয় এবারের আসর। চার দিনব্যাপী এ আয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উদ্যোক্তা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি এবং দর্শক অংশ নেন। ‘ডব্লিউসিআইটি ২০২১’ সম্মেলনের সমান্তরালে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অ্যাসোসিও ‘ডিজিটাল সামিট ২০২১’।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ১১ নভেম্বর ২০২১ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে চার দিনব্যাপী এ বিশ্ব সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মিলনমেলা এই বিশ্ব সম্মেলনের বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন সারাবিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে ছিলেন- আধুনিক ইন্টারনেটের অন্যতম জনক ভিন্ট সার্ফ, আধুনিক ইন্টারনেটের অন্যতম জননী ড. রাদিয়া পারম্যান, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (ডাব্লিউডাব্লিউডাব্লিউ) উদ্ভাবক স্যার টিমোথি বারনার্স লি, উইটসা মহাসচিব জেমস এইচ পয়জান্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (সেন্টার ফর দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন, চায়না) উপপ্রধান ডেনিয়েল কেরিমি, উই রোবটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড. পেট্রিক মেয়ার, আলীবাবার মূল কোম্পানি এন্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (আলিপে ও গ্লোবাল পেমেন্ট পার্টনারশিপ) গৌমিং চেং, ইন্টেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ওমর এস ইশরাকসহ অন্যরা। এছাড়া দেশীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এশিয়ার নোবেল হিসেবে খ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী, বাংলাদেশে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অণুজীববিজ্ঞানী ও পরিচালক সেঁজুতি সাহা এ আয়োজনকে সমৃদ্ধ করেন।
আন্তর্জাতিক এ আয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরতে সম্মেলনের প্রথম দিন ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ নাইট’। এ আয়োজনে বাংলাদেশের বিগত ১২ বছরের তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগতি উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে স্বাধীন সর্বোভৌম রাষ্ট্র ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর গৃহীত উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করা হয়। এদিন ‘অ্যাসোসিও অ্যাওয়ার্ড নাইট’ অনুষ্ঠানে এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
তৃতীয় দিন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অগ্রগতি, অর্জন-গৌরবের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এদিন ‘উইটসা আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড নাইট’ অনুষ্ঠানে সারাবিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। চতুর্থ দিন ডব্লিউসিআইটির রজতজয়ন্তী উদযাপন ও সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, বিপিও এবং আউটসোর্সিং নিয়েও ছিল একাধিক সেমিনার। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স। এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
এছাড়া ভিন্ন ৩টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ আরও তিনটি পুরস্কার অর্জন করেছে। এর মধ্যে ‘সাসটেইনেবল গ্রোথ/সার্কুলার ইকোনমি’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ, ‘ইনোভেশন ই-হেলথ সলিউশন’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়ন-১৬২৬৩ এবং ‘ই-এডুকেশন অ্যান্ড লার্নিং’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, হংকং, নেপাল, তাইওয়ান, গ্রিস, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছে।
এ আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, উইটসা চেয়ারম্যান ইয়ানিস সিরোস, উইটসা মহাসচিব জেমস এইচ পয়সান্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি শাহিদ-উল-মুনীর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল মান্নানসহ অন্যরা।
আয়োজন সম্পর্কে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ বিশ্ব সম্মেলন মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সংশ্লিষ্টদের ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ফলে তথ্যপ্রযুক্তির আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও বিকাশে অবদান রাখবে। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উল্লেখ্য, পরবর্তী উইটসা বিশ্ব সম্মেলন মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে।