দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক দৃশ্য ধরে রাখতে জবই বিলে পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম প্রয়োজন


মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: হেমন্ত শেষে আসে শীতের প্রাদুর্ভাব। আর শীতের শুরুতেই নওগাঁ জেলার অন্তর্গত সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে আসতে শুরু করে নানান জাতের পরিযায়ী (অতিথি) পাখি। পাখির কলকাকলীতে মন জুড়ায়না এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত-ই কম। শীত মৌসুমে বিলের চারিদিকে অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে। পুরো জবই বিলে ফুটে ওঠে যেন নৈস্বর্গিক দৃশ্য! নানান জাতের পাখির কিচির-মিচির আওয়াজে মন ভরে ওঠে।

প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য ফুটে উঠে সারা বিল এলাকা জুড়ে। শীতের শুরু থেকে সুদুর রশিয়া, সাইবেরিয়া সহ বিশ্বের শীত প্রধান দেশ হতে শত শত পাখি এসে বিলে এক অনন্য সৌন্দের্য্যরে বিকাশ ঘটায়। কিন্তু পরিযায়ী পাখিদের নির্দিষ্ট বসার জায়গা ও অভয়াশ্রম সহ কোন বনাঞ্চল না থাকায় বেশিদিন থাকতে পারে না অতিথি পাখিরা। জায়গার অভাবে দু-একদিনের মধ্যে চলে যায় অন্য এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, নানা দেশ হতে আগত পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজা হাঁস, বালি হাঁস, পাতি কূট সহ দেশী জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ী, ছন্নি হাঁস সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে শীত মৌসুমে। অতীতে এক শ্রেণীর পাষান ব্যক্তি অবাধে বিল হতে এসব অতিথি পাখি শিকার করে হাটবাজারে বিক্রি করত। কিন্তু বর্তমান সময়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো বিকট শব্দ করে মাছ শীকার করার ফলে উড়ে যাচ্ছে অতিথি পাখি গুলো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কঠোরতা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যদের জোরালো নজরদারীতে বিল এলাকায় পাখি শিকার বন্ধ হলেও নেই পাখিদের বসবাসযোগ্য কোন নির্দিষ্ট স্থান। যার ফলশ্রুতিতে এই বিলে শীত মৌসুমে পাখি আসলেও বেশিদিন থাকতে পারে না। এছাড়াও স্থানীয় মৎস্যজিবীদের নৌকার বিকট আওয়াজে স্থায়ী হতে পারে না পরিযায়ী পাখিগুলো।

এই বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে কচুরি পানা না থাকায় ধীরে ধীরে এক সময় বিলে পাখি আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার কিছু উৎসাহী যুবক “জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা” নামে একটি সংগঠন তৈরী করে বিলে অতিথি পাখি সহ সব ধরনের পাখি শিকার বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এছাড়া বিলে কোন কচুরিপানা না থাকলেও সরকারী ও বে-সরকারী ভাবে মৎস্যজীবিগন খরা মৌসুমে বিলের পানি শুকিয়ে গেলে মা মাছগুলি রক্ষায় বিলের মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় বাঁশ কাঠ ও কিছু কচুরিপানা দিয়ে কাঠা নামের একটি করে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে। যাতে খরা মৌসুমে মা মাছগুলি যাতে ওই স্থানে লুকিয়ে থাকতে পারে।

বর্তমানে জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যদের প্রচেষ্টাও মৎসজীবিদের তৈরীকৃত কচুরিপানার কাঠা থাকায় অতীতের মত আবারো শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশী পাখিরা অবাধে বিলে আসতে শুরু করে।বিলে পাখি আসলেও বড়ো আকারের গাছ বা বনাঞ্চল না থাকার ফলে বেশি সময় স্থায়ী হতে না পেরে আবারো ফিরে যায়।

জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, “বিলের যে কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে পাখির অভয়াশ্রম তৈরী করে সে স্থানে মাছ শীকার করা বন্ধ রাখলে সারা বছর পাখিগুলো নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। এছাড়াও বনবিভাগ হতে যদি নির্দিষ্ট স্থানে বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয় সেক্ষেত্রেও সুবিধা হতে পারে”। বর্তমানে জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির জরিপ অনুযায়ী জবই বিলে দেশী ও বিদেশী মিলে মোট ৯ হাজার ৭ শ’ ১২টি পাখি রয়েছে বলে জানা গেছে।

শীতকালে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পাখি প্রেমীরা আসেন পাখির সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে।কিন্তু পাখিদের জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থান বরাদ্ধ করে অভয়াশ্রম তৈরী করলে সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানান পর্যটকরা। তবে নওগাঁ-১আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সরকারের খাদ্যমন্ত্রালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি সাপাহার উপজেলার জবই বিলটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জবই বিল সাপাহার উপজেলার একটি অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র। এই বিলের ঐতিহ্য ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ ধরে রাখতে জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিকল্প নেই। সম্প্রতি সময়ে বিলের উপর দিয়ে ণির্মিত সেতু সহ সড়কের দু’পাশের পিলার গুলো রং করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে জবই বিলে পাখিদের বসার এবং বসবাসের জন্য একটি নির্দিষ্ট অভয়াশ্রম তৈরী করা হোক এমনটাই দাবী স্থানীয় জনগন ও পর্যটকদের।