নাটোরের হালতিবিলে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ


সোহেল রানা, নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের হালতিবিলের খোলাবাড়িয়া এলাকায় নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ। নলডাঙ্গা উপজেলার মিনি কক্সবাজার খ্যাত এলাকায় বর্ষাকালে ভাসমান এই সৌধ হাজারো দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ গত বছর এক কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।

১৯৭১ এর ডিসেম্বরে পাশের গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান জেনে খোলাবাড়িয়াতে অবস্থান গ্রহন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। গ্রামকে রক্ষা করতে এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রামের চারপাশে খনন করা হয় আটটি পরিখা। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাঁশিলা গ্রাম থেকে মর্টার ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। থেমে থেমে চারদিন ধরে চলে যুদ্ধ।

এই যুদ্ধে শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক পাঠান। তাঁর বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার আগদিঘা গ্রামে। যুদ্ধ চলে টানা চারদিন। তবে অসম এই যুদ্ধে রসদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা অন্যত্র চলে যান। শুরু হয় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের দ্বারা খোলাবাড়িয়ার বাড়িতে বাড়িতে লুটপাট আর অগ্নিসংযোগ কার্যক্রম। ঐ সময় খোলাবাড়িয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দানকারী ও সহায়তা প্রদানকারী প্রবীণ ব্যক্তি জসিম উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তবে কালের পরিক্রমায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তানের অবস্থান দূর্বল হয়ে গেলে খোলাবাড়িয়া গ্রামের রাজাকারদের পিটিয়ে হত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ডিসেম্বরের আট তারিখে খোলাবাড়িয়া গ্রাম হানাদার মুক্ত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা নাটোর জজকোর্টের পিপি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্মৃতি সৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিদের তালিকাসহ একটি নামফলক থাকা উচিৎ।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা আক্তার বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা সন্নিবেশিতসহ প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার, সংগ্রহশালা স্থাপনসহ স্মৃতি সৌধে আরো সমৃদ্ধি আনা যেতে পারে। এ ব্যাপারে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

আগামীকাল স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বিজয় মিছিল নিয়ে এই স্মৃতি সৌধে উপস্থিত হবেন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ। শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবেন মুক্তিযুদ্ধে আতœদানকারী শহীদদের, কামনা করবেন তাদের বিদেহী আতœার শান্তি।