প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ডাকবক্স


ছবিতে ঃ ডাকঘরের সামনে ঝুলানো “ডাকবক্স”, ছবিটি গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর ডাকঘরের।

আশ্রাফুল আলম, গোদাগাড়ী ( রাজশাহী ) থেকে: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা ডাক ঘরের “ডাকবক্স”।
দেশের এক সময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল ডাকযোগ। দূর-দূরান্তে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন, পরিবার- প্রিয়জন হৃদয়ের ভাব ব্যক্ত করত চিঠি-পত্রের মাধ্যমে । অনেকদিন পর মানুষ খোঁজ- খবর পেত পত্রের মাধ্যমে । সমস্ত আবেগ, অনুভূতি আর মায়া বহন করত সেই চিঠি- পত্র। সেই রাখালিয়া মেঠো পথ পেরিয়ে মানুষ ছুটে আসত চিঠি দিতে ডাকযোগে অর্থাৎ ডাকবাক্সে। শুধু তাই নয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাংবাদিকরাও ডাকযোগে পাঠাত হাতে লিখে সংবাদ। আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই স্মৃতিময় দিন যেন অতীত ।

১৬৫৩ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রথম ডাক বাক্স স্থাপন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৮২৯ সালে ডাক বাক্সগুলো ফ্রান্সের সর্বত্র ব্যবহার ছিল। পোল্যান্ডে প্রথম সর্বজনীন ডাক বাক্স ১৮৪২ সালে ওয়ারশতে স্থাপন করা হয়। উপমহাদেশে প্রথম ডাক সার্ভিস চালু করা হয় ১৭৭৪ সালে। ব্রিটিশ ভারতে প্রথম ডাক বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। ডাক বাক্স উনিশ শতাব্দীর শেষ দিকে হংকং পৌঁছায় এবং সেগুলো কাঠের তৈরি ছিল। ১৮৯০-এর দশকে, ধাতুর তৈরি থাম বাক্স হংকং-এ আবির্ভূত হয় এবং ১৯৯০ দশকের শেষ দিক পর্যন্ত ব্যবহার ছিল। ১৮৯০-এর দশক থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সকল ডাক বাক্সগুলোতে লাল রঙ ছিল এবং ১৯৯৭ সালের পর সবুজ রঙ করা হয়।

প্রযুক্তির ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ডাক ঘরের “ডাকবক্স”। এখন আর আগের মতো ডাক অফিসে লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ছেনা। ফেলে আসা দিনগুলোতে বার্তা প্রেরক ও মনের ভাব আদান-প্রদান ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে উচ্চারিত হত। আশির দশক পর্যন্ত যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি এবং জরুরি বার্তার জন্য টেলিগ্রাফ এবং টেলিফোন। জেলা শহর ব্যতীত গ্রামীণ জনপদে টেলিফোনের ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত ছিল।

পরিবার-প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য অপেক্ষমান হয়ে থাকতে হতো । এখন আর সেই দিন নেই। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে দিন বদলের ন্যায় পাল্টে গেছে সবকিছু। এখন নিমিশে খবরাখবর পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে বসে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে। প্রতি সেকেন্ডে আলাপ চলছে অত্যাধুনিক মোবাইলে।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জেলা, উপজেলাসহ ইউনিয়ন ভিত্তিক ডাকuijklঘরে অতীতে  যেভাবে ডাকবক্সে চিঠিপত্র আদান প্রদান করা হতো এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে । জেলা , উপজেলা গুলোতে ডাকঘর চোখে পড়লেও ইউনিয়ন গুলোতে ভিন্ন চিত্র। নেই ডাকঘর নেই ডাকবক্স।

\ক’জন শিক্ষার্থী জানান, বর্তমানে ই-মেইল, ইমো ও ফেসবুক ব্যবহারের কারণে মানুষ আর আগের মত চিঠি লিখতে চায় না। ফলে আর একটি ঐতিহ্য আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। ধীর গতির কারণে মানুষ ডাকযোগা থেকে মুখ ফিরিয়ে কুরিয়ার বা অন্য মাধ্যমে চিঠিপত্র পাঠাচ্ছেন।

বর্তমান সময়ে হরেক রকমের মোবাইলসহ অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ফলে এলাকার গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল নারী-পুরুষদের চিঠিপত্র আদান -প্রদান করতে ডাক বিভাগে আসতে দেখা যায় না। চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী ডাকঘর “ডাকবক্স” দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তির যুগে অনায়াসে কাল গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।