দীর্ঘ অপেক্ষার পর চালু হলো সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে পণ্যবাহী যান চলাচল


স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ প্রটোকলের আওতায় চালু হলো রাজশাহীবাসীর দীর্ঘ কাক্সিক্ষত সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল এবং সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথ। পদ্মা ও মহানন্দা নদীর মোহনায় অবস্থিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ হতে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের জন্য এ নৌপথটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় আজ।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা এগারোটায় বাংলাদেশ অংশের সুলতানগঞ্জে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, এমপি এ নৌপথটির উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষ্যে সুলতানগঞ্জে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্মসচিব সেলিম ফকির।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব প্রতিদিনই নতুন উচ্চতা পাচ্ছে। সুলতানগঞ্জ-মায়া নতুন নৌপথটি তারই প্রতিফলন।
তিনি বলেন, আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য একটি উপাদান হলো পাথর। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মাত্র ৫ শতাংশ পাথর পাওয়া যায়। বাকী ৯৫ ভাগই ইইউ, ভিয়েতনাম, ওমান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে আনতে হয়। দূরবর্তী ওই দেশগুলো থেকে মাদার ভেসেলের মাধ্যমে সমুদ্র বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করতে প্রতি মেট্রিক টনে প্রায় ২০ মার্কিন ডলার খরচ হয়। ভারত থেকে কয়েকটি স্থল-বন্দর দিয়ে সিএন্ডএফ এর মাধ্যমে পাথর আমদানিতে খরচ হয় ১৩ মার্কিন ডলার আর সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে আমদানি করলে খরচ ৮/৯ মার্কিন ডলারে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
শুষ্ক মৌসুমে এই নৌপথটির নাব্যতা চ্যালেঞ্জ থাকলেও মাত্র ২০ কি.মি. দূরত্বের সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে সারাবছরই স্বল্প নাব্যতার নৌযান দ্বারা উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পরিচালনা করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাসিক মেয়র জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে নৌপথটি রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ও পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত গেছে। দীর্ঘ দিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। তাঁর প্রচেষ্ঠায় প্রথম পর্যায়ে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচলের শুরু হলো আজ। পরবর্তীতে এটি রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত চালু হবে বলেও তিনি জানান। এর মাধ্যমে রাজশাহী নগরীতে নৌবন্দর স্থাপিত হবে এবং রাজশাহীর ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে, অর্থনীতি বদলে যাবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে বাণিজ্য চালু ছিল। পরে নৌপথটি বন্ধ হয়ে যায়। সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। এতে উপকার পাবে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।