পিআইও’র দুনীর্তির প্রতিবাদ করায় ক্ষমতাশীন দলের সভাপতিসহ ২৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার-২


রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ঈদ উপলক্ষে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) প্রকল্পের টাকা বিতরণকালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকান্ডে ক্ষেপে উঠে ক্ষুধার্ত জনসাধারনরা। জনতাদের ভয়েস শুনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হাজারো জনতার ভীড় ভেঙে উদ্ধার করে প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে।

 

এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহব্বান করেন। পরে ওই কর্মকর্তাকে ওখান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তারই অনুদান হিসেবে তার অপকর্ম ঢাকতেই উপজেলা আলীগের সভপতি,উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

 

এ ঘটনায় ক্ষমতাশীন দলের(আ’লীগ) ২৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয় যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি সাধারন জনগনের। ঘটনাটি ঘটেছে ঈদের দু’দিন আগে (বুধবার) দুপুরের দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। ওই দিন সন্ধায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ বাদী হয়ে রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকারসহ অজ্ঞাত আরও ২৫জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়ে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।

 

এবিষয় রাজিবপুর থানার ওসি নবিউল হাসান সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় অজ্ঞাত ২০-২৫জনের নামে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-রাজিবপুর সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা ও একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগকর্মী আব্দুর রহমান বিশ্বাস।

 

রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ সাংবাদিকদের বলেন, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরোর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঈদের দু’দিন আগে বুধবার দুপুরে তার ওপর হামলা চালায়। পরে ওই রাতেই আমি নিজে বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।

 

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো জানায়, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা ওই কর্মকর্তার উপর কোনপ্রকার হামলা করা হয়নি। বরং ক্ষুধার্ত মানুষের ভীড় থেকে উদ্ধার করেছে নেতাকর্মীরা। তার উপরে কোন প্রকার হামলা চালানো হয়নি। তাকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে নিরাপদস্থানে সরি নেয়াটাই অপরাধ।ওই কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম ঢাকতেই দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।

 

রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের সব টাকা ঈদের আগেই যাতে জনগণের মাঝে বিতরণ করা হয় তার জন্য ইউএনওসহ ওই কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু পিআইও দুপুর ১টার মধ্যে টাকা বিতরণ করতে তাড়াহুড়ো করলে অনেকের নাম এবং টাকা না পাওয়ায় স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়।

 

পরে ওই কর্মকর্তাকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়াটাই অপরাধ। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এ ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাই।

 

রাজিবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষের ভেতরে ছিলেন। জনগনের হৈ-চৈ শুনে বাইরে বের হয়ে শুনেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে দেখি নাই।

 

রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া খুবই দু:খজনক। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনবে।

 

রাজিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা ও কর্মী আব্দুর রহমান বিশ্বাস এ ঘটনায় জড়িত না। তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে।