ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দেখে এলেন বিদেশি দূতরা


নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখে এসেছেন ১০ দেশ ও জোটের ঢাকা মিশন প্রধানরা। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার অংশ হিসাবে এই পরিদর্শনের আয়োজন করে।

মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভাসানচরে সরকারের নেওয়া ব্যাপক উন্নয়ন ও মানবিক কার্যক্রম কূটনীতিকদের দেখানো ছিল এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য। পরিদর্শনে গিয়ে বিদেশি দূতেরা বাঁধ, ভবন, আশ্রয়কেন্দ্রসহ ভাসানচর দ্বীপের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ঘুরে দেখেছেন। একইসঙ্গে তারা ঘুরে দেখেন সেলাই ও হাতের কাজের মতো রোহিঙ্গাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগও।

 

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার, ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন, কানাডীয় হাই কমিশনার বেনোয়া প্রিফঁতেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টিরিংক, ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মারিও সুশো, জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহল্টৎস, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারউইজ, জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, অস্ট্রেলীয় হাই কমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা উসমান তুরান কূটনীতিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূতেরা এবং তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে একলাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতার মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা শুরু করেছিল বাংলাদেশ সরকার।

দুপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে ওই সময় এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছিল, “এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”

এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার বলেছিল, “এই পর্যায়ে এসে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একমাত্র বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়া, সেটাই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান। একইসঙ্গে আমরা বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক চেষ্টাকে খাটো করা এবং ভুল ব্যাখ্যা না করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাস গড়ানোর পর ১৭ মার্চ প্রথমবারের মতো ভাসানচর পরিদর্শনে যায় জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল। এর মধ্যে সরকারও ছয় দফায় ১৮ হাজার ৩৩৪ জন রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করেছে।

জাতিসংঘ দলের পরিদর্শনের দুই সপ্তাহের মাথায় শনিবার ১০ বিদেশি দূতকে ভাসানচরে নিয়ে যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই দুদলের বাইরে কেবল ওআইসির সহকারী মহাসচিবের নেতৃত্বে সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচর পরিদর্শনে গিয়েছিল।

পরিদর্শনের সময় বিদেশি দূতদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মোহসীন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত উপস্থিত ছিলেন।