নওগাঁয় আরামবাগ কনফেকশনারীর বিভিন্ন খাবার খেয়ে শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী আরামবাগ কনফেকশনারীর তৈরি লাচ্ছা, সেমাই, বার্গার, পিজ্জাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে ঈদের দিন থেকে বুধবার পর্যন্ত শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৬০জন মানুষ গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সবাই পেটের ব্যথা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এদের মধ্যে আবার অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এছাড়া প্রতি মুহুর্তেও অসুস্থ্য হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। খাবারের বিষক্রিয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে জানান সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি পত্র দিয়ে ফাষ্টফুড বিক্রি বন্ধ করার জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। এছাড়্ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই। এদিকে, শহরের সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে ভর্তি একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান অসুস্থ্য সবাই ঈদের আগের দিন নিজের পরিবার-পরিজনদের জন্য আরামবাগ কনফেকশনারী থেকে কেউ ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা, কেউ সেমাই, কেউ বার্গার আবার কেউবা পিজ্জা কিনে দোকানে খান ও বাসায় নিয়ে যান। এরপর সেই খাবার পণ্যগুলো খাওয়ার কিছু পর থেকেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। পরে পাতলা পায়খানা।

এরপর পরিস্থিতি আস্তে আস্তে খুব খারাপ আকার ধারন করলে ঈদের দিন থেকে শুরু করে সবাইকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত অনেকেরই অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। বড়দের পাশাপাশি কয়েকজন শিশুর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ঔষুধ খেয়েও অনেকেরই কাজ হচ্ছে না। হাসপাতালের শয্যায় গুরুত্বর অসুস্থ্য ব্যক্তিদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।

এই সব রোগীদের অনেককেই আরামবাগ কনফেকশনারী দোকানের বিভিন্ন ব্যক্তিরা গিয়ে কারো কাছে এই বিষয়টি না বলতে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি এবং লোভ দেখাচ্ছেন বলেও জানান রোগী ও তার স্বজনরা। হাসপাতালের পক্ষ থেকে খাবারের বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের যথেষ্ট ভালো চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছেও বলে জানান রোগীরা। আক্রান্ত অনেকেই আবার প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতেও চিকিৎসা গ্রহণ করছে।

এই ঘটনার পর থেকে শহরের বাটার মোড়ে অবস্থিত আরামবাগ কনফেকশনারীর দোকানে তালা লাগিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। যার কারণে আরামবাগ কনফেকশনারী সংশ্লিষ্ট কোন মুখপাত্রের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, আরামবাগ কনফেকশনারীর খাবার যারা যারা খেয়েছেন তারা সবাই গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। আমার আত্মীয়ের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আবার শিশুসহ একটি পরিবারের ৬জন সদস্যও আরামবাগের পিজ্জা খেয়ে পেটে প্রচন্ড ব্যথা ও ডায়রিয়া নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন রোগীকেই অন্যত্র রেফার্ড করার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা প্রদান করার চেস্টা করে যাচ্ছি।

তিনি আরো জানান, খাবারের বিষক্রিয়া থেকেই মূলত এই মানুষগুলো অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। হয়তো ওই খাবার পন্যগুলো নিম্ম মানের মেয়াদ উর্ত্তীন উপকরন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কিংবা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে যার কারণে সেই খাবারগুলো থেকে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই নওগাঁ শহর ও তার আশেপাশের যে মানুষগুলো ওই খাবার পণ্যগুলো খেয়েছেন তারা অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক খালিদ হাসান মেহেদী জানান, খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি পত্র দিয়ে ফাষ্টফুড খাবার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কি কারনে এই অবস্থা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।#