মাঝআকাশে যেভাবে জন্ম হয়েছিল ‘অলৌকিক’ শিশুর


শিশু মিরাকলকে কোলে নিয়ে ড. আইশা। ছবি : সংগৃহীত

উগান্ডাগামী একটি রাতের ফ্লাইটে এক ‘মিরাকল’ (অলৌকিক) শিশু জন্মগ্রহণ করার ঘটনায় দারুণ উচ্ছ্বসিত ড. আইশা খাতিব। আনন্দিত তাঁর হওয়ারই কথা, কেননা মাঝআকাশে শিশুটিকে মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন কানাডীয় এ চিকিৎসক।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ড. আইশা খাতিব টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। কাতার এয়ারওয়েজের দোহা থেকে উগান্ডার এন্টেবে শহরগামী একটি ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন তিনি। ফ্লাইট উড্ডয়নের ঘণ্টাখানেকের মাথায় আইশা ইন্টারকমে শুনতে পান জরুরি সহায়তার আর্তি।

কাতার এয়ারওয়েজের ওই ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে বাড়ি ফিরছিলেন উগান্ডার এক অভিবাসী শ্রমিক। সন্তানসম্ভবা ওই নারী মাঝআকাশে তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দেন।

শেষপর্যন্ত শিশুটি সুস্থভাবেই জন্মগ্রহণ করে এবং চিকিৎসকের নামানুসারে শিশুটির নাম রাখা হয় ‘মিরাকল আইশা’।

করোনা-জর্জরিত টরন্টোতে ব্যস্ত কর্মসূচি পার করা ড. আইশা চোখেমুখে কর্মক্লান্তির স্পষ্ট ছাপ নিয়ে সবে তখন অনেক দিনের পর পাওয়া বিশ্রাম উপভোগ করা শুরু করেছেন।

হঠাৎ ইন্টারকমে ভেসে আসে সাহায্যের আর্তি। জানতে চাওয়া হয়—ফ্লাইটে কোনো চিকিৎসক আছেন কি না। ক্লান্তি ভুলে এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন আইশা।

ড. আইশা বলেন, ‘আমি দেখলাম রোগীর চারপাশ ঘিরে অনেক মানুষ।’ তা দেখে তিনি ধরে নেন—বোধ হয় কারও হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

ড. আইশা বলেন, ‘কাছে যেতেই দেখি এক নারী তাঁর মাথা করিডোরের দিকে, আর পা জানালার দিকে দিয়ে আসনে শুয়ে আছেন। এবং শিশুটি মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসছে!’

শিশুটিকে প্রসব করাতে ড. আইশাকে দুজন যাত্রী সাহায্য করেছিলেন। তাঁদের একজন অনকোলজি নার্স, অন্যজন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) একজন শিশু বিশেষজ্ঞ।

জন্মের পর শিশুটি খুব জোরেশোরেই কাঁদছিল বলে জানান ড. আইশা। দ্রুত শিশুটির সুস্থতা পরীক্ষা শেষে তিনি এমএসএফ-এর শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে তুলে দেন আরও ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য।

‘আমি শিশুটিকে দেখলাম। তার শারীরিক অবস্থা ঠিকঠাক ছিল। শিশুর মায়ের দিকে তাকালাম। দেখলাম তিনিও ঠিক আছেন’, বলেন ড. আইশা।

“সব দেখেশুনে বললাম—‘অভিনন্দন, একটি মেয়েশিশুর জন্ম হয়েছে।’ শুনে পুরো প্লেন করতালি দিতে শুরু করে এবং উল্লাস করতে থাকে। তখনই মনে পড়ল—‘ও আচ্ছা, আমি তো এখন  প্লেনে আছি, আর সবাই তো দেখছেই। গল্পের সবচেয়ে ভালো অংশটি হলো—তিনি (শিশুটির মা) আমার নামে তাঁর সন্তানের নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেন’ যোগ করেন ড. আইশা।

শিশুটিকে নিজের প্রিয় একটি জিনিস উপহার দেন ড. আইশা। আরবিতে তাঁর নামাঙ্কিত সোনার নেকলেস গলা থেকে খুলে শিশু আইশাকে উপহার দেন ড. আইশা।

‘ভাবলাম ওকে নেকলেসটা দিলে ওর কাছে সেই ডাক্তারের সামান্য একটা স্মৃতিচিহ্ন থাকবে, যে তাকে নীল নদের ৩৫ হাজার ফুট ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় জন্মগ্রহণে সাহায্য করেছে’, বলেন ড. আইশা।

মিরাকলের জন্মের ঘটনাটি গত ৫ ডিসেম্বরের। কিন্তু, ড. আইশা টরন্টোতে কোভিড রোগীদের চিকিত্সায় এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, চলতি সপ্তাহে ওই ঘটনার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ছবি শেয়ার করেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর ড. আইশাকে উগান্ডা থেকে টরোন্টোয় ডেকে পাঠানো হয়। উগান্ডায় স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন তিনি।

টরোন্টোয় ফেরার ফ্লাইটে হয় আরেক কাণ্ড।

ওই ফ্লাইটেও জানতে চাওয়া হয়—যাত্রীদের মধ্যে কোনো চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ আছেন কি না।

‘সৌভাগ্যক্রমে সেখানে অন্য একজন ডাক্তার ছিলেন’, হাসতে হাসতে বলেন ড. আইশা। ‘আমি তখন বললাম, আমি দুই সপ্তাহ আগে একটি শিশুকে প্রসব করিয়েছি। যদি দরকার পড়ে আমি ২৫এ আসনে আছি’, যোগ করেন তিনি।