রাজশাহীতে সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নিলো কোটি টাকার ৩৭ টি গরু


তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর তানোর উপজেলার সমান্তবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলার সরকারি খামার থেকে কথিত নিলামে নামমাত্র মুল্যে সিন্ডিকেট চক্র প্রায় কোটি টাকা মুল্যের  ৩৭টি গরু হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা অভিযোগের তীর ছুড়েছে এক খামার মালিক উপজেলা চেয়ারম্যানের দিকে।
উপজেলার রাজাবাড়িহাটে আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে এই ঘটনা ঘটেছে। নিলামে অংশ নিতে মোট ৩৫৭ জন ব্যাংক ড্রাফট (বিডি) জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু  অজ্ঞাত কারণে নিলাম ডাক ধরেছেন  মাত্র পাঁচজন। অন্যরা কেউ নিলামে অংশ নেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিলাম ডাকের আগের রাতে জনৈক  জনপ্রতিনিধির গরুর খামারে সমঝোতা বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে সমঝোতার মাধ্যমে বিডি প্রতি আনুপাতিকহারে  আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। পরের দিন লোক দেখানোর জন্য মাত্র ৫ জন নিলাম ডাক ধরেন।
স্থানীয়রা জানান, জনৈক জনপ্রতিনিধিদের নেপথ্যে মদদে কৃষক লীগ নেতা ইমন মণ্ডল এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে করছে। তারা গত সোমবার সকালে নামমাত্র দামে খামারের ৩৭টি গরু হাতিয়ে নিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, নিলামে বড় আকারের একটি ষাঁড়ের ওজন ছিল প্রায় ১২ মণ। খামারের কর্মচারী মহাসিন আলী ডাক ধরেন। সরকারি ডাক ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০০ টাকা বাড়িয়ে ডাক ধরেন তাজমুল নামের নিলামে একজন অংশগ্রহণকারী। এরপর আরও ২০০ টাকা বাড়ান মেহেরাব নামের আরেকজন। সবশেষ কালু আরও ২০০ বাড়িয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬০০ টাকায় ষাড়টি কিনে নেন। তবে বর্তমানে কুরবানির হাটে এই ষাঁড়টির দাম অন্তত চার লাখ টাকা।
একইভাবে মাত্র ১ লাখ ২৫ থেকে ১ লাখ ৩১ হাজারের কিছু বেশি টাকার মধ্যে আরও তিনটি ষাঁড় পানির দরে বিক্রি করা হয়েছে। নিলাম চলাকালে দেখা গেছে, খামারের কর্মচারী যে সরকারি দর ঘোষণা করছেন, তার চেয়ে ৬০০ টাকা বেশি দরে প্রতিটি গরু বিক্রি হচ্ছে। নিলামে কেজি ওজনের একটি এঁড়ে গরুর দর ছিল ৫৭ হাজার ৭৫০ টাকা। এটির দর হাঁকা হয় ৫৯ হাজার টাকা। ডাকে ৫৯ হাজার ৬০০ টাকায় এটি বিক্রি হয়।
সিডিউলের মূল্য অপেক্ষা বেশি দর হাঁকার বিষয়ে জানতে চাইলে খামারের উপ-পরিচালক ইসমাইল হক বলেন, জীবন্ত গরুর মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ২৭৫ টাকা। গরুর ওজন নেওয়া হয়েছে দুইমাস আগে। নিলামের প্রক্রিয়া শেষ করতে করতেই প্রায় দুই মাস চলে গেছে। এই সময়ের মধ্যে গরু খামারের খাবার খেয়েছে। একটু বড় হয়েছে। তাই সিডিউল অপেক্ষা এক-দুই হাজার টাকা বেশি দর ধরা হচ্ছে। এ টাকা সরকারি কোষাগারেই জমা হবে।
নিলামের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন। সিন্ডিকেট নিয়ে জানতে চাইলে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, খামার থেকে যখনই গরু নিলামে তোলা হয় তখনই সিন্ডিকেট করে এলাকার কিছু লোক গরু কিনে নেন। পরে তারা সেই গরু খামারেই বিক্রি করেন। অন্য কেউ নিলামে অংশ না নিলে তাদের কিছু করার থাকে না। নিলাম বাতিল করলেও লাভ হবে না।
যখন নিলাম হবে, তখনই সিন্ডিকেট হবে।তিনি আরও বলেন, ৩৫৭ জন বিডি জমা দিয়েছেন নিলামে অংশ নিতে; কিন্তু পাঁচজনের বাইরে কেউ ডাকলেন না। এমন নয় যে, কেউ কাউকে ডাকতে বাধা দিয়েছেন। বাধা যেন দিতে না পারে তার জন্য পুলিশ রাখা হয়েছিল কিন্তু তারপরও কেউ ডাকেননি।
এ নিলামের সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এক জনপ্রতিনিধি খামার মালিকের নেপথ্যে  কৃষক লীগ নেতা ইমন মন্ডল। কথা বলার জন্য তাকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি নিলাম স্থলে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়; কিন্তু তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে সেখান থেকে সরে পড়েন।