রাজশাহীতে ১০ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু


স্টাফ রিপোর্টার:  রাজশাহীতে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরের কোনো বাসও রাজশাহীতে প্রবেশ করেনি। সকাল প্রকার যাত্রীবাহি বাস বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে বাস বন্ধ থাকায় সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না চলায় অটোরিকশা বা ছোট বাহনে মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। এজন্য তাদের বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে।

পরিবহন মালিক সমিতির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১) সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে। ২) হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি) চলাচল বন্ধ করতে হবে। ৩) জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করতে হবে। ৪) কোভিডকালে গাড়ি চলাচল না করায় সে সময়ে ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে। ৫) সব ধরনের সরকারি পাওনাদির (ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। ৬) চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত নানাবিধ জটিলতা নিরসন করতে হবে। ৭) পরিবহনের যাবতীয় কাগজ হালনাগাদ বা সঠিক থাকার পরও নানাবিধ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ৮) উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ৯) মহাসড়কে হাট-বাজার আয়োজন বা পরিচালনা করা যাবে না এবং চলমান হাটবাজার অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে। ১০) যাত্রী ওঠানামার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করতে হবে।

সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহানগরের শিরোইল, নওদাপাড়া, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহন কেউবা বাড়ি ফিরে যান। অনেককে আবার রাজশাহী রেল স্টেশনে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজশাহীর আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরাও। সিএনজি, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা দিচ্ছেন।

আব্দুল মমিন জানান, আমার শুক্রবার সরকারি চাকরির পরীক্ষা আছে। তাই বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছি। চারদিন আগেই ট্রেনের টিকিট পাইনি। গত রাত থেকে আবার বাস বন্ধ। এখন বিকল্প উপায় পাচ্ছি না।
মোহাম্মদ আলী জানান, নওগাঁ থেকে এসেছি পরিবার নিয়ে রাস্তায় গাড়ির খোঁজে করছি। নওগাঁ থেকে রাজশাহী আসতে সময় লেগেছে ৫ ঘণ্টা। খরচ লেগেছে ৫০০ টাকা। যেখানে স্বাভাবিক দিন লাগে ২০০ টাকা। এখন ঢাকা যেতে কত টাকা লাগবে বুঝতেছি না। আমি গরিব মানুষ। চাকরিতে যোগ দিতেই হবে।

তবে, ধর্মঘটের ফলে চাপ বেড়েছে ট্রেনে। তাই বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট ইতি মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। টিকিট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েই রওয়ানা দিচ্ছেন। এছাড়া রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে যেসব ট্রেন আসছে ও যাচ্ছে তাতে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ লক্ষ্য করা গেছে। পরিবহণ শ্রমিকরা জানান, যে দশ দফা দাবি সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছিলাম সে দাবির কোন বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আমরা আজকে পহেলা ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে রাজশাহী বিভাগের সকল মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার জন্য আমরা ধর্ম ঘটের আহ্ব¦ান করেছি। এটা আমাদের অনিদিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট আবেদন করেছি। সরকারের কাছে পূর্ণ আশ্বাস আমাদের দাবি গুলো মেনে নিলে আমরা এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আমাদের সাধারণ ব্যবসায় আমরা ফিরে যেতে সক্ষম।

আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের পরিবহন এটা সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা জনগন কে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এ পরিবহন ব্যবসা। কিন্তু আমাদের এই দাবিগুলো দীর্ঘ দিনের দাবি। আমাদের ন্যার্য দাবি আমরা দাবি নিয়ে মাসের পর মাস দিনের পর দিন দীর্ঘ দিন থেকে আমরা এই দাবি গুলো দিন দরবার করে আসছি। কখনোই আমাদের দাবি গুলো পূর্ণাঙ্গ সুরাহ না হওয়ার কারনে ধর্ম ঘটে যেতে আমরা বাধ্য হয়েছি।

এ ব্যাপারে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক মাতিউল হক টিটু বলেন, আমাদের অনেক দিনের দাবি ছিল এটি। আমরা নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। তবে আমাদের কোনো আশ্বাস না দেওয়ায় আমার সকাল থেকে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতিতে গেছি। আমরা তো মানুষ পরিবহন করছি না। তাই ভোগান্তি আমাদের দিক থেকে নেই। আর বিএনপির সঙ্গে এই পরিবহন ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আমাদের দাবি আদায়ের স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি। বুধবারের মধ্যে সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে।